হাবিপ্রবির বিজনেস অনুষদ সেরা নুসরাত, পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক

 নুসরাত আফরিন শিল্পা
নুসরাত আফরিন শিল্পা  © টিডিসি ফটো

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ( হাবিপ্রবি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত নুসরাত আফরিন শিল্পা। তিনি বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ থেকে সবোর্চ্চ সিজিপিএ (৩ দশমিক ৯২) পেয়ে স্নাতক পাস করেন। এছাড়াও তিনি এই অনুষদ থেকে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পেতে চলেছেন।

নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলায় মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নুসরাতের। বাবা চাকরিজীবী হলেও মা গৃহিণী। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট নুসরাত। তুলশীরাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ হতে জিপিএ ৪ দশমিক ৯৪ পেয়ে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় তার। তবে হাল ছেড়ে দেননি নুসরাত। তিনি তার সকল দুর্বলতা কাটিয়ে ২০১৩ সালে সানফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ হতে গোল্ডেন এ+ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পাশাপশি দিনাজপুর বোর্ড হতে উচ্চ-মাধ্যমিকে সাধারণ বৃত্তিসহ ভালো ফলাফলের জন্য ডাচ-বাংলা ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তি পান। পরিবারের দোয়া, সাপোর্ট ও শিক্ষকদের সহায়তায় ভালো ফলাফল করতে পেরেছেন বলে জানান নুসরাত।

নুসরাত আফরিন শুরু থেকেই তেমন বইপড়ুয়া না হলেও লেখাপড়া করতেন নিয়মিত। তবে মনের মধ্যে শুরু থেকেই তার জেদ ছিল জীবনে ভালো কিছু করার। যাতে তার পরিবার নুসরাতকে নিয়ে গর্ব করতে পারে। মাধ্যমিকে এ প্লাস না পাওয়ায় মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন যাতে উচ্চ মাধ্যমিকে সেই ভুল গুলো না হয়। পরবর্তী সময় কঠোর অধ্যবসায়ের কারণে তিনি তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছিলেন।

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধে মূল লড়াই ৫৫ হাজার আসনে

উচ্চ-মাধ্যমিকে সাফল্যের পর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধে নামেন নুসরাত। পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ মেয়ে হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই সকলের ইচ্ছা ছিলো যাতে নিকটবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন তিনি। তাই ২০১৩-১৪ সেশনে শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন নুসরাত। এই সময়ে হাবিপ্রবির বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে অপেক্ষমান তালিকায় তার নাম আসলেও বাবার সাথে নির্দিষ্ট তারিখে ভর্তি হতে এসেও ফিরে যেতে হয় তাকে। ভর্তি হতে না পেরে বিষণ্ন বাবাকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে দাঁড়িয়েই নুসরাত দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেন পরের বছর মেধাতালিকায় স্থান করে নেয়ার। পরের বছর শুধুমাত্র হাবিপ্রবির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ২০১৪-১৫ সেশনে মেধাতালিকায় ৩৪ তম হয়ে তার স্বপ্নের কাঙ্খিত ক্যাম্পাস হাবিপ্রবিতে ভর্তি হন নুসরাত।

নুসরাত জানায়, আমি সবসময় ক্লাস লেকচার খুব মনোযোগ সহকারে শুনতাম এবং লেকচারগুলো সুন্দরভাবে খাতায় টুকে রাখতাম। যা আমার ভালো ফলাফল করতে সহায়তা করেছে। প্রথম সেমিস্টারে আমি সিজিপিএ-৪ অর্জন করি। উক্ত ফলাফলের পরে বাকি পথচলা সহজ হয়ে যায়। পরিবার ও সহপাঠীরাও অনেক সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। প্রেজেন্টেশন খুব উপভোগ করতাম। এটি নিজেকে উপস্থাপন করা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য খুব সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পড়ালেখার ক্ষেত্রে সহপাঠীদের সাধ্যমত সহায়তা করার চেষ্টা করেছি।

পরিবারের উপর যেন চাপ না পরে সে ব্যাপারে সবসময় ভাবতাম। তাই টিউশনি ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং এ ক্লাস নিয়েছি। যা আমাকে আর্থিকভাবে অনেক সহায়তা করেছে। তবে বাবার পাশাপাশি বড় দুই বোন সবসময় বড় ভাইয়ের মতো আমাকে আর্থিক ও মানসিকভাবে সহায়তা করেছে। তাদের সহায়তা ছাড়া আমি এক কথায় অচল।

আরও পড়ুন: বাঁ পায়ে লিখেই জিপিএ-৫ পাওয়া সেই তামান্নাকে প্রধানমন্ত্রীর ফোন

অনুষদের উদ্দেশ্যে বলব, তারা যেন মনোযোগ সহকারে ক্লাস লেকচার শুনে এবং শিক্ষকদের দেখানো পথে চলে। ফিন্যান্স সম্পর্কে বেসিক ধারণা যেন স্পষ্ট থাকে। জীবনে সফলতা অর্জন করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে। লক্ষ্য যদি ঠিক থাকে তাহলে আল্লাহ তা পূরণ করে দিবেন।

তিনি আরও বলেন,  এ সফলতা শুধু আমার একার না। বাবা-মা ও শিক্ষকদের দোয়া ও সহোযোগিতা, ভাই-বোন ও বন্ধু-বান্ধবদের সহযোগিতার জন্য এটি অর্জন করতে পেরেছি। তাই এ সফলতা সবার, শুধু আমার একার নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা বিষয়টিকে উপভোগ করেন নুসরাত। নিজে যা জ্ঞান অর্জন করেছেন তা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। আর সেজন্য ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে চান নুসরাত। এছাড়াও বিদেশে গিয়ে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের ইচ্ছা তার।

বর্তমানে নুসরাত ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন স্যারের তত্ত্বাবধায়নে গবেষণার কাজ করছেন। এছাড়া ভবিষ্যতে বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করার আগ্রহ আছে তার।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence