বশেমুরবিপ্রবি

অর্ধাহারে দিন কাটছে লাইব্রেরিতে কর্মরত অর্ধশত শিক্ষার্থীর

বশেমুরবিপ্রবি লাইব্রেরিতে জব
বশেমুরবিপ্রবি লাইব্রেরিতে জব  © ফাইল ছবি

‘আমরা একবেলা খেলে তো দু-বেলা না খেয়ে থাকি, অনেক সময় এমনও হয় অর্থ বাঁচাতে গিয়ে ক্যান্টিন থেকে সকালের খাবার এনে সেটাকে দু ভাগ করে এক ভাগ সকালে খাই আর অপর ভাগ দুপুরের জন্য রেখে দেই’— এভাবেই নিজেদের বর্তমান অবস্থার কথা বর্ণনা দিচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) লাইব্রেরিতে পার্টটাইম চাকরি করা বিশ্ববিদ্যালয়টির এক শিক্ষার্থী।

জানা যায়, ২০১৮ সাল থেকে বশেমুরবিপ্রবিতে অধ্যয়নরত দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তার উদ্দেশ্যে লাইব্রেরিতে পার্টটাইম চাকরি প্রদান করা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে ২০১৯ সালে এসে পার্টটাইম চাকুরিরত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৬০ জনে। পরবর্তীতে ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত এসকল শিক্ষার্থীরা কর্মরত থাকলেও ছুটির পর আর কাজে ফেরানো হয়নি এসব শিক্ষার্থীদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার বাবা একজন কৃষক ছিলেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি এখন কাজ করতে পারছেন না। এছাড়া আমার ছোট ভাইয়ের কিডনি জটিলতা থাকায় চিকিৎসার পিছনে অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে এই লাইব্রেরি থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে আমার পড়ালেখা চলতো।

“এছাড়া আমরা যারা লাইব্রেরিতে কাজ করতাম তাদের হলে গণরুমে সিট দেয়াসহ আবাসন, রেজিস্ট্রেশন ফি ও পরীক্ষার ফি সম্পূর্ণ মওকুফ করা হয়েছিলো। কিন্তু বর্তমানে পার্টটাইম চাকরিটা বন্ধ করে দেয়ায় আমার পক্ষে তিনবেলা ঠিকঠাক খেয়ে পড়ালেখা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে গোপালগঞ্জে টিউশন পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। এমতাবস্থায় যদি আমাদেরকে পুনরায় পার্টটাইম চাকরির সুযোগ প্রদান না করা হয়, তাহলে আমার পক্ষে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।”

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমার বাবা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কিন্তু তিনি ব্রেইন স্ট্রোক করায় আমার পরিবারের আয়ের পথ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। আমার পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে হয়। আমি লাইব্রেরি থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে আমার পড়াশোনাসহ যাবতীয় খরচ বহন করতাম।

“যেহেতু আমাদেরকে লাইব্রেরির চাকরিটা চালিয়ে নিতে দেয়া হচ্ছে না এমতাবস্থায় পড়ালেখা চালিয়ে নেয়া খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। আমি প্রশাসনের নিকট অনুরোধ জানাই যাতে আমাদের এই সুযোগ পুনরায় প্রদান করা হয়।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মো. শারাফাত আলী বলেন, এ বিষয়ে উপাচার্যের সাথে কথা হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত করেছি। পরবর্তী সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। আশা করি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. একিউএম মাহাবুব বলেন, এ মুহুর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে পর্যাপ্ত টাকা নেই। তাই এখনি আমার পক্ষে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না।


সর্বশেষ সংবাদ