গবেষণা প্রকল্প নিয়েছেন ১৪৭ শিক্ষক, প্রতিবেদন জমা পড়েছে মাত্র চারটি
- ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া
- প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:০৪ AM , আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২০, ০১:৫০ PM
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্যই ছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পঠন-পাঠনসহ গবেষণার সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি। যদিও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর প্রায় ১০ বছর পার হলেও গবেষণায় তেমন কোনো অবদান রাখতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়টি। কারণ অনুসন্ধানে দেখা যায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও বশেমুরবিপ্রবির অন্যতম অবহেলিত খাত হয়ে দাঁড়িয়েছে গবেষণা।
প্রতি অর্থবছরেই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণা খাতে বিভিন্ন হারে অর্থ বরাদ্দ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। পরবর্তীতে গবেষণা প্রস্তাবনার ভিত্তিতে সে অর্থ শিক্ষকদের ভাগ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি গবেষণা কার্যক্রম তদারক ও পর্যবেক্ষণের দায়িত্বও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।
বশেমুরবিপ্রবির রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-২০২০— এ পাঁচ বছরে ১৪৭ জন শিক্ষককে দেড়শটি গবেষণা প্রকল্প পরিচালনার জন্য অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ছিল এক বছর। যদিও গত ৫ বছরে ১৪৭ জন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র চারজন তাদের গবেষণা প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জমা দিয়েছেন। অর্থাৎ সিংহভাগ শিক্ষকই তাদের প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বশেমুরবিপ্রবির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো: আব্দুর রহিম খান বলেন, “এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে গবেষণা খাতের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা এবং রিপোর্ট প্রদান বাধ্যতামূলক করা জরুরি। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নতুন হওয়ায় আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এতদিন পর্যন্ত অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় এবং রিপোর্ট প্রদানের বাধ্য বাধকতা না থাকায় অনেক শিক্ষক গবেষণা সম্পন্ন করলেও রিপোর্ট জমা দেননি। তবে আমরা চেষ্টা করছি সবকিছু একটা সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসতে।”
এদিকে গবেষণার জন্য বরাদ্দ করা অর্থের সমন্বয়ও করছেন না অনেক শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ বছরে মোট ২০ জন শিক্ষক সমন্বয় না করে অর্থ নিয়েছেন। এমনকি এই তালিকায় রয়েছেন বশেমুরবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনও। তিনি ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ‘Krishibandhob Sheikh Hasina: Ceres to Champions’ শীর্ষক গবেষণার জন্য ৮০,০০০ টাকা; ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ‘কৃষিবান্ধব সরকার’ ও ‘কৃষিবান্ধব জননেত্রী’ শীর্ষক ২টি গবেষণার জন্য ৩ লক্ষ টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ‘Propagation and conservation of elite local and exotic germplasm at BSMRSTU Campus’ ও ‘Standardization of production Technology of Oyster Mushroom’ শীর্ষক ২ টি গবেষণার জন্য ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা সহ মোট ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বশেমুরবিপ্রবির অর্থ দপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ সুজাউদ্দিন বলেন, ‘সাবেক উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিন গবেষণা প্রজেক্টগুলোর সম্পূর্ণ অর্থই অগ্রীম নিয়েছেন। উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগের পর অর্থগুলো ফেরত দেয়ার জন্য আমরা তাকে একাধিকবার চিঠিও দিয়েছি কিন্তু তিনি এখন পর্যন্ত এই অর্থ ফেরত দেননি।’
গবেষণা খাতের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, ‘গবেষণা খাত থেকে শিক্ষকদের অর্থ বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা উচিত। প্রস্তাবিত গবেষণা প্রজেক্টটি প্রকৃতপক্ষেই গবেষণার জন্য উপযুক্ত কি না এবং আবেদনকারী শিক্ষক সঠিকভাবে গবেষণাটি পরিচালিত করতে পারবেন কি না এই বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়া জরুরি। কিন্তু এটা খুবই দুঃখজনক যে ইতোপূর্বে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সবকিছু সাবেক উপাচার্যের একার ইচ্ছে অনুযায়ী চলতো এবং গবেষণা খাতও তার ব্যতিক্রম নয়। তিনি মূলত গবেষণার উদ্দেশ্যে নয় শিক্ষকদের খুশি রাখতে অর্থ বরাদ্দ দিতেন।’
সার্বিক বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য ড. এ. কিউ. এম মাহবুব বলেন, ‘গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে নীতিমালা না থাকার বিষয়টি আমি ইতিমধ্যে জেনেছি এবং বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে একটি নীতিমালা করা হবে এবং গবেষণা খাতের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।’