বুয়েটছাত্রের সাক্ষ্য: মুখ না খুলতে হুমকি দেওয়া হয়েছিল

আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে আন্দোলনে এভাবেই কেঁদে ফেলেন তাঁর সহপাঠীরা
আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে আন্দোলনে এভাবেই কেঁদে ফেলেন তাঁর সহপাঠীরা  © ফাইল ফটো

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন বুয়েটের আরও দুজন শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন তৌহিদুল ইসলাম ও ইয়ামিন হোসেন। দু’জনই বুয়েটের শেরেবাংলা হলের শিক্ষার্থী ও ১৭তম ব্যাচের ছাত্র। রোববার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ তাঁদের সাক্ষ্য নেন।

এই দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলার ২৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। বুয়েটছাত্র তৌহিদুল ইসলাম আদালতকে বলেন, আবরারের মৃত্যু নিয়ে মুখ না খুলতে তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

এঁদের মধ্যে তৌহিদুল ইসলাম নিহত আবরার ফাহাদের রুমমেট ছিলেন। আগামীকাল সোমবারও এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেছেন ওই ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।

তৌহিদুল ইসলাম আদালতকে বলেন, গত বছরের ৬ অক্টোবর বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে বাইরে যান। কাজ শেষে রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে আবার তিনি রুমে আসেন। তখন রুমে আবরার ছিলেন না। তবে রুমে ছিলেন রুমমেট মিজান (আসামি) ও সৈকত (সাক্ষী)। রাত ১২টার দিকে তিনি ও ওই হলের আরেক ছাত্র সাইফুলসহ বুয়েটের তিতুমীর হলের সামনে চা খেতে যান। সেখানে ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাদাতের সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়। তখন আবরারের কথা জিজ্ঞেস করলে সাদাত তাঁকে জানান, আবরারকে মারা হচ্ছে।

তৌহিদুল ইসলাম আদালতকে আরও বলেন, সাইফুলকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ১০১১ নম্বর কক্ষে ফেরার পথে হলের সিঁড়িতে জেমির (আসামি) সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়। তখন আবরারের খবর জানতে চাইলে জেমি তাঁকে বলেন, আবরারের অবস্থা খুব খারাপ।

এরপর জেমি ক্যানটিনের দিকে চলে যান। তিনি যখন রুমে অবস্থান করছিলেন, তখন মোরশেদ অমর্ত্য ইসলাম (আসামি) সেখানে এসে আবরারের বালিশ নিয়ে যান।

আবরারের খবর জানতে চাইলে মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম জানান, আবরার এখন ঘুমাচ্ছে। আরাফাত রহমান রাত ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে তৌহিদুলের কক্ষে এসে তাঁকে নিয়ে রুমের বাইরে যান। তখন হলের বারান্দায় আবরারকে তোশকের ওপর দেখতে পান তিনি। সে সময় বুয়েটের চিকিৎসক মাসুক এলাহীকেও সেখানে দেখতে পান।

মাসুক এলাহী তখন জানান, আবরার আর বেঁচে নেই। এই কথা শুনে তৌহিদুল কক্ষে ফিরে এসে রুমমেট মিজানকে (আসামি) জানান। তখন আবরারের মৃত্যুর বিষয়ে মুখ খুলতে নিষেধ করেছিলেন মিজানুর রহমান। মিজানুর তখন বলেছিলেন, ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামান মনির (আসামি) বলেছে, আবরারের মৃত্যুর বিষয়ে যেন মুখ না খুলি। তাঁরা বিষয়টা হলের স্যার ও পুলিশের সঙ্গে ‘ডিল’ করবে। মনিরুজ্জামানসহ অন্যরা ভয়ভীতি দেখায়।

আরেক সাক্ষী বুয়েটের শিক্ষার্থী ইয়ামিন হোসেন আদালতকে জানান, আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখার জন্য সেদিন হলের প্রভোস্টের রুমের সামনে তাঁরা অবস্থান নেন। পরে হলের সাধারণ ছাত্রদের মধ্য থেকে সাত থেকে আটজন হলের সিসিটিভির ফুটেজ দেখেন। সিসিটিভির ফুটেজ সেদিন তাঁরা দেখতে পান, রাত ৮টা ১৩ মিনিটের দিকে ১৭তম ব্যাচের ছাত্র তানিম, মোয়াজসহ সাত থেকে আটজন আবরারকে তাঁর রুম থেকে বের করে নিয়ে যায়।

গত বছরের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটে শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ মামলায় গত বছরের ১৩ নভেম্বর বুয়েটের ২৫ ছাত্রের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। গত ২১ জানুয়ারি অভিযোগপত্রটি আমলে নেন আদালত।

তিন আসামি পলাতক রয়েছেন। গত ২ সেপ্টেম্বর বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বুয়েটের ২৫ ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।


সর্বশেষ সংবাদ