কুয়েট

শিক্ষার্থীদের এক দফা ‘ভিসির পদত্যাগ’, জড়িতদের বহিষ্কার চান শিক্ষকরা

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এবং শিক্ষকদের মানববন্ধন
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এবং শিক্ষকদের মানববন্ধন  © সংগৃহীত

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৬ এপ্রিল) তারা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ প্রায় শতাধিক শিক্ষককে নিয়ে একটি মতবিনিময় সভা করেন। সভা শেষে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিপক্ষে মৌন মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশে অংশ নেন। পাশাপাশি শিক্ষক সমিতির প্যাডে এ বিষয়ে একটি বিবৃতিও দেন শিক্ষকরা।

এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়েছে। উপাচার্যের অপসারণের দাবি এবং শিক্ষার্থী বহিষ্কারের ঘটনায় ক্যাম্পাসজুড়ে অস্থিরতা আরও বাড়ছে।

শিক্ষক সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, ১৪ ফেব্রুয়ারির ঘটনার প্রকৃত দোষীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না। অন্যদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, উপাচার্য আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে উৎসাহ দিয়েছেন। তাই উপাচার্যের অপসারণই তাদের একমাত্র দাবি।

মানববন্ধনে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সায়েদুল ইসলাম বলেন, গুটিকয়েক শিক্ষার্থীর উসকানিতে কুয়েটের পড়ালেখার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ভিসি স্যার সবসময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করেছেন। তাই তার পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় যারা জড়িত, তদন্তে তাদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাছুদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষক সমিতি জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনো ক্লাস করবেন না। শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষকদের নিয়ে অপ্রীতিকর মন্তব্য করছে, যা মুখে উচ্চারণ করার মতো নয়। তবে আজ ক্লাস শুরুর বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান ও ডিনদের সাথে একটি মিটিং করেছি বলে জানান তিনি।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী মুখোমুখি হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি চিন্তা করছি। কীভাবে সমাধান করা যায় তা মিটিগেট করতে হবে। সরাসরি মুখোমুখি বলা যাবে না, কারণ এটি শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে হয়েছে।

এদিকে কুয়েটের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল উপাচার্যের আহ্বানে অনুষ্ঠিত সভায় বেশ কিছু প্রশ্ন তোলা হয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। সভায় শিক্ষকরা প্রশ্ন তুলেছেন, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলাকারী বহিরাগতদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য কীভাবে পৌঁছাল। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য দাবি করেন, তিনি নিজে কোনো তথ্য দেননি এবং ধারণা করেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ হয়তো তথ্য দিয়েছেন।

সভায় ‘তদন্ত প্রতিবেদন হাতে আসার পর শিক্ষার্থীদের কেন সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে’ এমন প্রশ্ন তোলার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, এমন প্রশ্নও তোলা হয়নি। সাময়িক বহিষ্কারাদেশ চূড়ান্ত কিছু নয়, এটি একদিনেরও হতে পারে, দুইদিনেরও হতে পারে বলে জানান তিনি।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চেয়ে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। তবে সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় তারা গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি হননি এবং পিআরও’র মাধ্যমে যোগাযোগ করতে বলেন। জানা গেছে, শিক্ষকদের গণমাধ্যমে কথা বলার বিষয়ে মৌখিকভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, আমরা এমন কোনো নির্দেশনা দিইনি। গতকালও কয়েকজন শিক্ষক গণমাধ্যমে কথা বলেছেন বলে জানান তিনি।

তবে যেসব শিক্ষক গণমাধ্যমে কথা বলেছেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যপন্থী এবং শিক্ষার্থীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বলেও জানা গেছে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী মুখোমুখি অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যতে কী প্রভাব ফেলবে, জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনও ভাবার সুযোগ পাইনি। এত ব্যস্ততার মধ্যে আছি যে এসব মাথায় আনতেও পারছি না। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা একটি বিষয়ে আঁটকে আছে, আর শিক্ষকরা বলছেন বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না। এমন অবস্থায় তিনি কঠিন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিপরীতে মানববন্ধনের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সায়েদুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি নই। শিক্ষার্থীদের একটি অ্যাজেন্ডা রয়েছে, আমাদের আছে আরেকটি। আমরা চাই ক্যাম্পাস সুন্দরভাবে চলুক।

তিনি আরও বলেন, বহিষ্কারের বিষয়টি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। শৃঙ্খলা কমিটি বিষয়টি পুনরায় অনুসন্ধান করবে। শিক্ষকরা শুধু অপরাধীদের বিচার দাবি করছেন, শাস্তি নয়। প্রকৃত অপরাধীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানান শিক্ষক সমিতির সভাপতি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence