বুটেক্স ক্যাম্পাসের হাসিমাখা মুখের ডাক—‘নেন ভাই, গরম বাদাম আছে’

ক্যাম্পাসে বাদাম বিক্রি করছেন তাহের মিয়া
ক্যাম্পাসে বাদাম বিক্রি করছেন তাহের মিয়া  © টিডিসি ফটো

বিশ্ববিদ্যালয়ের পকেট গেট পেরোলেই চোখে পড়ে এক পরিচিত দৃশ্য—একজন বয়স্ক মানুষ ছোট্ট একটি ট্রে নিয়ে বসে আছেন। ট্রেতে সাজানো বাদাম, ছোলা, চানাচুরের বাহার। দূর থেকেই ভেসে আসে হাসিমাখা মুখের ডাক—“নেন ভাই, গরম বাদাম আছে!” চারপাশে জটলা বেঁধেছে শিক্ষার্থীদের। কেউ বাদাম নিচ্ছে, কেউ ছোলা, কেউবা শুধু গল্প করতেই এসেছে। দৃশ্যটি বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স)। আর যাকে ঘিরে এই প্রাণচাঞ্চল্য, তিনি বাদামওয়ালা তাহের মিয়া।

তাহের মিয়া—অনেকের কাছে তিনি "তাহের মামা" নামেও পরিচিত। ২০০৫ সাল থেকে বুটেক্স ক্যাম্পাসেই তার জীবন ও জীবিকার গল্প বোনা শুরু। তার ভ্রাম্যমাণ দোকানে আছে বাদাম, ডাল ভাজা, ছোলা, আর আছে অদ্ভুত এক আত্মিক টান, যা শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার মাঝে তৈরি করেছে এক অদৃশ্য বন্ধন।

তাহের মিয়ার জীবন গল্পটা একটুখানি শুনলে বোঝা যায়, কী অসাধারণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে এই হাস্যোজ্জ্বল মানুষটি। ছোটবেলা কেটেছে দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে। তিন ভাইয়ের সংসারে কলেজ পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও, অভাবের তাড়নায় নামতে হয়েছে জীবিকার খাতায়। আজ তার দুই ছেলে—একজন উচ্চমাধ্যমিকের পর পাড়ি জমিয়েছেন দুবাই, অন্যজন ডিগ্রি কলেজে পড়ছেন। দুই মেয়েকে পাত্রস্থ করেছেন, গুছিয়ে দিচ্ছেন পরিবার। মুখে একধরনের শান্তি—"আমার আল্লাহ মেহেরবান, কষ্ট করে খাই, কিন্তু অভাব বোধ করি না।"

বছর পেরিয়ে বছর, ঋতু বদলায়, ক্যাম্পাসে প্রজন্ম বদলায়—কিন্তু বদলায় না তাহের মিয়ার প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে উপস্থিতি। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত—সব ঋতুতেই দেখা যায় তাকে ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে যেতে। ক্লাসের বিরতিতে তার চারপাশে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা—কেউ আড্ডা, কেউ হাসি, কেউ গল্প করতে আসে। তাহের মিয়া যেন শুধু বাদাম বিক্রি করেন না, ক্লান্ত মনকে হাসিতে ভরিয়ে দেন।

ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, “তাহের মামা আমাদের রুটিনের অংশ। বাদামের সাথে যেন দেন একরাশ আন্তরিকতা। ক্লান্তির মুহূর্তে তার হাসিটাই আমাদের সবার জন্য আশ্রয়।”

ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের রাশেদুল ইসলাম রিশাদ বলেন, “মামা খুব ভালো মানুষ। অনেকবার ফাও বাদাম খেয়েছি। শুধু বিক্রেতা না, তিনি আমাদের বন্ধু, অভিভাবক।”

ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী এমদাদুল হক আফনান বলেন, “মাঠে গিয়ে মামাকে না দেখলে ক্যাম্পাসটাই ফাঁকা ফাঁকা লাগে। ক্যাম্পাসের একটা আবেগের অংশ তিনি। প্রতিবার একটু বেশি বাদামের আবদার করি, আর তিনি হাসিমুখে দিয়ে দেন।”

তাহের মিয়া নিজেও বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয়টাই আমার ভালোবাসার জায়গা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মুখচেনা হয়ে গেছি। ওরা আমাকে আপন করে নিয়েছে, সেটাই আমার বড় প্রাপ্তি।”


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence