বুটেক্সের হলে পলিটেকনিক ছাত্রদলের সভা নিয়ে ‘সংঘর্ষের সূত্রপাত’

দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে
দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে  © টিডিসি

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির (বুটেক্স) শিক্ষার্থীরা। গতকাল রবিবার (২৪ নভেম্বর) রাতে বুটেক্সের আজিজ হলের সামনে দফায় দফায় সংঘর্ষের এ ঘটনায় উভয়পক্ষের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনার জেরে আজ সোমবার (২৫ নভেম্বর) দিনব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা পলিটেকনিক শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বুটেক্সের একটি হলে প্রবেশ করাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি হয়। এতে ঘণ্টা চারেক দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। একপর্যায়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনেন।

জানা যায়, চলমান কারিগরি আন্দোলনে ঢাকা পলিটেকনিকের একাংশের নেতৃবৃন্দের সাথে মিটিং করতে রবিবার রাত ৯টার দিকে বুটেক্সের আজিজ হলে প্রবেশ করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ওই সময় হলের শিক্ষার্থীরা তাদের বের হয়ে যেতে বাধ্য করলে বাকবিতণ্ডা শুরু হয় এবং উভয়পক্ষের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

825x465ঘটনার সময়ের আজিজ হলের চারটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ 

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কারিগরি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি এবং ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের কেমিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাদ্দাম ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, বুটেক্সের সাথে ছাত্রদলের নেতারা নিজেরা ঝামেলা করেছে। তারপর তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বুঝিয়েছে—আমাদের প্রতিষ্ঠানের ওপর আক্রমণ হয়েছে। বুটেক্স শিক্ষার্থীরাও ছাত্রদলকে কিছু না বলে আমাদের ছোট ভাইদের মেরেছে। ছাত্রদলের উসকানি আর বুটেক্সের না বুঝে করা আক্রমণই মূলত এই সংঘর্ষকে বড় করেছে। 

বুটেক্সের আজিজ হলের শিক্ষার্থীরা জানায়, বুটেক্স ক্যাম্পাস এবং হলে ছাত্ররাজনীতি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।পলিটেকনিকের হলগুলোতেও সুযোগ না পেয়ে মিটিং করতে বুটেক্সের হলে আসে ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী। হলের শিক্ষার্থীরা তাদেরকে চলে যেতে বললে গেটের বাইরে গিয়ে দাঁড়ায়। সেখানেই শুরু করে বাকবিতণ্ডা, জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত হলে সবাই চলে যায়। কিছুক্ষণ পরই বাইরে থেকে হলের ভেতরে ঢিল ছোঁড়া শুরু করে। তারপরই শুরু হয় এই সংঘর্ষের। হলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনার শুরুটা বোঝা যায়।

825x465 (1)সংঘর্ষের ঘটনায় নিরাপত্তা প্রদানে প্রশাসন ব্যর্থ বলে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রকাশ

উভয়পক্ষের শিক্ষার্থীরাই বলছে, রাজনৈতিক কারণে বলি হতে হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। শান্তিপূর্ণ সমাধান চান দুই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা। আজ সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাতে বুটেক্স উপাচার্য, ঢাকা পলিটেকনিক অধ্যক্ষ এবং তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসির সভা করার কথা রয়েছে। 

বুটেক্স উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জুলহাস উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঘটনার সময় সহকারী প্রক্টরের সাথে আমিও উপস্থিত ছিলাম। শিক্ষার্থীদের ওই মুহূর্তে থামানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আসার পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়। আমাদের অনেক শিক্ষার্থীর পাশাপাশি শিক্ষকরাও আহত হন। গুরুতর আহত তিনজন হাসপাতালে এখনো ভর্তি আছেন। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাই আমাদের প্রাধান্য। আমাদের শিক্ষকরা চেষ্টা করছেন ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়ার। ঘটনা তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে যা আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেয়া হবে। আমরা পলিটেকনিক শিক্ষকদের সাথেও কথা বলেছি। আশা করছি আজ রাতেই আমরা একসাথে বসবো।

825x465 (2)কারিগরি আন্দোলনের ৬ দফাসহ সংঘর্ষের ঘটনায় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা

ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের লতিফ ছাত্রাবাসের পশ্চিম শাখার হল সুপার মো. বাবুল হোসেন বলেন, সংঘর্ষ চলাকালে আমাদের তরফ থেকে বুটেক্স প্রক্টর দপ্তরে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোন উত্তর পাইনি। আমরা চেষ্টা করেছিলাম আমাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে, তারা যেন তাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু তা হয়ে উঠেনি সমন্বয়হীনতার কারণে। মসজিদের মাইক দিয়ে ঘোষণা দিয়েও থামানো যাচ্ছিলো না ইট পাটকেল।

ছাত্রদলের সম্পৃক্ততার অভিযোগটি অস্বীকার করে ঢাকা পলিটেকনিক শাখা ছাত্রদলের সভাপতি শাহীন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ৬ দফার আন্দোলন। এই আন্দোলনের সাথে ছাত্রদলের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তবে ছাত্রদলের কোনো নেতাকর্মী সরাসরি জড়িত কি না তা আমি নিশ্চিত নই। আর ছাত্রদল হল দখলেও যায়নি। এখানে উসকানিদাতা হিসেবে ছাত্রলীগের একটি অংশ কাজ করছে বলেও তিনি মনে করেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী শামীমুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি দুই প্রশাসনকেই একসাথে বসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি। দুই প্রতিষ্ঠানই তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শুনেছি, এখনও থানায় আসেননি বা আমাকে ডাকেননি। বুটেক্সের যে হলটি নিয়ে নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে সেখানে আজ রাতেও সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তা বহাল থাকবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence