কেমন ভিসি চান ডুয়েট শিক্ষার্থীরা
- ডুয়েট প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০৯ AM , আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫২ AM
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান পদত্যাগ করেন। এরপর প্রায় দুই মাসেও ভিসি নিয়োগ হয়নি ডুয়েটে। তবে দু’এক দিনের মধ্যে ভিসি নিয়োগ হতে পারে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা কেমন ভিসি চান, সে প্রসঙ্গে তাদের মতামত জানিয়েছেন।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা এমন একজন ভিসি চায়, যিনি নেতৃত্ব দিতে সক্ষম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়নে কাজ করবেন। যিনি ছাত্রদের সমস্যাগুলো গুরুত্ব সহকারে সমাধান করবেন, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন পরিচালনা করবেন, গবেষণা ও উদ্ভাবনে অগ্রগামী হবেন এবং ক্যাম্পাস জীবনের উন্নয়নে শিক্ষামূলক সকল কার্যক্রমে সমর্থন দেবেন।
আমরা শিক্ষার্থীরা এমন একজন ভিসির প্রত্যাশা করি, যিনি সুপরিকল্পিত এবং কার্যকর নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও মান বৃদ্ধিতে অবদান রাখবেন। অ্যাকাডেমিক এবং গবেষণামূলক ক্ষেত্রে উন্নতির দিক নির্দেশনা প্রদান করবেন এবং শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও এ ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করবেন। আমরা ডুয়েটের শিক্ষার্থীরা আমাদের সমস্যাগুলো বিশেষ করে ক্যাম্পাসের অবকাঠামোগত সমস্যা থেকে শুরু করে একাডেমিক সমস্যাগুলো ভিসির কাছ থেকে গুরুত্ব সহকারে সমাধানের আশা করি, যোগ করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তথা ভাইস-চ্যান্সেলর কেবল একজন প্রশাসক নয়, দলীয় কোনো পদ-পদবিও না। স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিসি এক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন, অগ্রগতির ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অপরিসীম।
হাবিবুর রহমান আরো বলেন, আমরা শিক্ষার্থীরা চাই, যিনি ভিসি হবেন, তিনি প্রশাসনের প্রতিটি সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মান বজায় রাখবেন। যদি কোনো ভুল বা দুর্নীতি ঘটে, আমরা শিক্ষার্থীরা আশা করি যে, ভিসি স্যার সে সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান করবেন। এ ধরনের স্বচ্ছতা প্রশাসনের প্রতি আমাদের শিক্ষার্থীদের আস্থা তৈরি করতে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে ভিসি স্যারের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং সমর্থনের আশা করে। আমরা চায়, যিনি ডুয়েটের ভিসি হবেন তিনি নতুন প্রকল্প এবং আন্তর্জাতিক সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমকে উন্নত করবেন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করবেন। সর্বোপরি আমরা ডুয়েটের শিক্ষার্থীরা এমন একজন ভিসির প্রত্যাশা করি, যিনি আমাদের অ্যাকাডেমিক, গবেষণামূলক এবং ব্যক্তিগত উন্নয়নে সহায়ক হবে।
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মাদ আমানুল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তথা ভাইস-চ্যান্সেলর কেবল একজন প্রশাসক নয়, দলীয় কোনো পদ-পদবিও না। স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিসি এক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন, অগ্রগতির ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অপরিসীম। একজন যোগ্য ভিসি পারেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে শ্রেষ্ঠত্বের শিখরে পৌঁছে দিতে। ভিসি হবেন সৎ, যোগ্য ও নিষ্ঠাবান। এ তিনটি প্যারামিটারে অবশ্যই তাকে উন্নীত হতে হবে।
ভিসি হবেন অন্যায়ের সাথে আপোষহীন। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রভাবশালী বা কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির সামনে কখনো নতজানু হবেন না। অন্যায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর মতো শক্ত মেরুদণ্ড সম্পন্ন হতে হবে। ট্রান্সপারেন্সি এবং অ্যাকাউন্টেবিলিটির ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবেন। ভিসি হবেন শিক্ষার্থীবান্ধব। শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব দিবেন। শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা হবে প্রধান বিবেচ্য বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা হবে তার অন্যতম দায়িত্ব।
ভিসি হবেন শিক্ষা ও গবেষণা অনুরাগী। ভিসি কেবল প্রশাসনিক দায়িত্বের পিছনে ছুটবেন না। শিক্ষা ও গবেষণার উন্নতি হবে তার অন্যতম লক্ষ্য। ভিসিকে হতে হবে ভিশনারি। শর্ট টার্ম এবং লং টার্ম গোল থাকবে। ডুয়েটকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করা হবে অন্যতম প্রায়োরিটি। র্যাংকিং নিয়ে তার মাথা ব্যথা থাকবে। গবেষণা কার্যক্রমে তিনি হবেন প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
তিনি আরো বলেন, ডুয়েটের যেহেতু কিছু স্বকীয়তা আছে, অন্যদের থেকে কিছু বিশেষত্ব আছে। তাই, ডুয়েটের শিক্ষকদের মধ্য থেকেই ভিসি হওয়া সমীচীন মনে করি। কারণ, নতুন কেউ এসে যেমন ডুয়েটকে বুঝতে সময় লাগবে, তেমনি বিগত দিনের অভিজ্ঞতা বলে, বাইরের কেউ ডুয়েট বা ডুয়েটিয়ানদের প্রতি ইনসাফ করতে ব্যর্থ হয়। তবে হ্যা, বিগত দিনের ফ্যাসিস্ট এর সহযোগী কাউকে ডুয়েটের ভিসি হিসেবে ছাত্রসমাজ কখনোই মেনে নেবে না।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম বলেন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে একজন ভাইস চ্যান্সেলর তথা ভিসির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান এবং গবেষণার মানোন্নয়ন- প্রতিটা বিষয়ই প্রভাবিত হয় একজন ভিসির নেতৃত্বে। ভিসি হবেন শিক্ষার্থীবান্ধব মনোভাবসম্পন্ন, যিনি শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে শুনবেন এবং সেগুলোর সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।
শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নের জন্য উন্মুক্ত আলোচনা ও মতামত গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করবেন। ভিসি হবেন প্রযুক্তিমনা এবং ডিজিটাল শিক্ষা পদ্ধতির উন্নতিতে আগ্রহী। ই-লার্নিং এবং ডিজিটাল রিসোর্সের সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রকৌশল ও প্রযুক্তিতে ডুয়েটকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরবে প্রত্যয়ী হবেন। ভিসি হবেন নৈতিকতা ও স্বচ্ছতা সম্পন্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং দুর্নীতির, স্বজনপ্রীতি কিংবা পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর হবেন।
ভিসি হবেন গবেষণা অনুরাগী। প্রযুক্তিগত গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ ও সহযোগিতা প্রদান করবেন। গবেষণার মান উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেবেন। সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার থেকে, কোনো অপশক্তির কাছে মাথানত না করে ডুয়েট কে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরাই হবে যার প্রধান লক্ষ্য। যার নেতৃত্ব ডুয়েট উদ্ভাবনী, প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধশালী এবং শিক্ষাবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
আরো পড়ুন: শাস্তি পেলেন ফরিদপুর মেডিকেল ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকসহ ১৮ জন
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মাহতাব হোসেন দোলন বলেন, ডুয়েটের অভ্যন্তরীণ শিক্ষকদের মাঝ থেকেই ভিসি চাই, যিনি ডুয়েটের কোনো সেমিনারে বক্তব্যরত অবস্থায় ‘তোমাদের ডুয়েট’ বলবে না। বলবে, ‘আমাদের ডুয়েট’। যিনি ডুয়েটকে মনেপ্রাণে লালন করবেন। সেসব শিক্ষক থেকে একজনকে ভিসি চাই, যিনি ছাত্রবান্ধব হবেন, শিক্ষার্থীদের যেকোনো প্রয়োজনে ঢাল হয়ে দাঁড়াবেন। এমন একজন ভিসি চাই, যিনি সকল প্রকার লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি মুক্ত থাকবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দ্বারা বজায় রাখতে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করবেন।
তিনি বলন, হঠাৎ কোনো নোটিশ ছাড়াই হল প্রভোস্টদের নিয়ে হলে ছাত্র-ছাত্রীদের কি সমস্যা হচ্ছে দেখতে বের হবেন, এমন ভিসি চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কীভাবে রিচার্জ ও গবেষণায় আরো এগিয়ে নেওয়া যায় এটাই হবে তার লক্ষ্য। বাইরে থেকে যিনি কিছুদিনের জন্য ডুয়েটের উপাচার্য হিসেবে চাকরি করতে আসবেন, তিনি শুধু চাকরি হিসেবেই নিবেন বিষয়টা, তিনি কখনো ডুয়েটকে নিজের মধ্যে লালন করতে পারবেন না। আমরা এমন একজন উপাচার্য চাই, যিনি নিজে ডুয়েট কে নিয়েই স্বপ্ন দেখবেন এবং শিক্ষার্থীদের দেখাবেন। আগামী দিনে প্রকৌশল অঙ্গনে প্রাণ প্রিয় ডুয়েট কে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন।