‘নো স্টুডেন্ট পলিটিক্স ইন বুয়েট’ হ্যাশট্যাগে মত দিচ্ছেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চালুর পক্ষ-বিপক্ষে চলছে আলোচনা-সমালোচনা
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চালুর পক্ষ-বিপক্ষে চলছে আলোচনা-সমালোচনা  © ফাইল ফটো

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি চালুর পক্ষ-বিপক্ষে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। মূলত দুটি পক্ষে ভাগ হয়ে এগোচ্ছে এ বিতর্ক। তবে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি না রাখার পক্ষেই বেশি মত দেখা যাচ্ছে। এ মতের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে NO_STUDENT_POLITICS_IN_BUET হ্যাশট্যাগে নিজেদের মতমত তুলে ধরছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. নুমেরি সাত্তার অপার লিখেছেন, আমি বুয়েটের একজন প্রাক্তন ছাত্র। বুয়েটের এলামনাই হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে। বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে আমি একাত্মতা ঘোষণা করছি এবং তাদের সফলতা কামনা করছি।

ফিরোজা বিনতে ওমর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ ব্যাচের এক ছাত্রী লিখেছেন, বুয়েটের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং এলামনাই হিসেবে আমি বুয়েটে সকল প্রকার ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে। বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে আমি একাত্মতা ঘোষণা করছি এবং তাদের সফলতা কামনা করছি। 

এছাড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে প্রায় একই ধরনের পোস্ট করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এম. মাশরুর হোসেন, ১৭তম ব্যাচের ছাত্রী নুসরাত মুমুসহ সাবেক অনেক শিক্ষার্থী।

বর্তমান শিক্ষার্থীরাও ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার ফাইয়াজ লিখেছেন, ‍শুধামাত্র একজন বুয়েটের শিক্ষার্থী হিসেবে নয়, আবরার ফাহাদের ভাই হিসেবে বলতে চাই— বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ফিরে আসলে তা বুয়েট ক্যাম্পাসকে দেশের সবচেয়ে অনিরাপদ ক্যাম্পাসে পরিণত করবে।

তিনি লিখেন, ২০০২ এ সনি আপুকে হত্যার পরে খুব বেশিদিন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল না। যার ফলাফল দেখি আমরা আরিফ রায়হান দীপের হত্যাকাণ্ডে। তারপরে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়নি। যার সর্বশেষ শিকার আবরার ফাহাদ।

অনিন্দ্য সাহা নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী লিখেন, আমি বুয়েটের একজন শিক্ষার্থী। আমি বুয়েট ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে কোনো প্রকার সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি পুনরায় প্রতিষ্ঠা হোক তা চাই না।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান আরও অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন। এর বাইরে বুয়েটের শিক্ষার্থী নন, এমন অনেক শিক্ষার্থীও ফেসবুকের এ ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়েছেন। তারাও বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে নিজেদের মতামত তুলে ধরছেন।

এদিকে, ক্যাম্পাসটিতে ছাত্র রাজনীতির তৎপরতা বন্ধে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচিতে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছেন, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস, অপশক্তির কবল থেকে মুক্ত থাকা এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে যাবেন।

শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে অবস্থান করলেও ছাত্রলীগ বলছে, যেকোনো মূল্যে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি চালু করা হবে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টও বুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেওয়া ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ স্থগিত করেছেন।

২০১৯ সালে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর আন্দোলনের মুখে ওই ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। ওই সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছে, তা অনুসরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার। তিনি বলেছেন, আদালত যেটা বলবে- আমাদের সেটা মানতে হবে। আদালতের আদেশ শিরোধার্য। আদালত অবমাননা আমরা করতে পারব না।

 

সর্বশেষ সংবাদ