চুয়েটের ওয়েবসাইটে নেই পর্যাপ্ত তথ্য, হয় না নিয়মিত হালনাগাদ

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © লোগো ও ছবি

বিশ্বায়নের এ যুগে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অন্যান্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার অন্যতম মাধ্যম হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচিতি, নিয়মিত বিজ্ঞপ্তি, একাডেমিক বিবরণ, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের যাবতীয় তথ্যাবলিসহ গবেষণার বিষয়বস্তু, ফলাফল সকল দিকের তথ্যভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে এ ওয়েবসাইট। 

দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের গুণগত মান মোটামুটি থাকলেও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অবস্থা নাজুক। নেই যথাযথ তথ্য, হয় না নিয়মিত হালনাগাদ। 

ডিজিটাল এ যুগে যেখানে ওয়েবসাইটকে বলা হয় তথ্য ভান্ডার সেখানে চুয়েটের ওয়েবসাইট যেন ঢাকের ঢোল। বাইরে থেকে অনেক তথ্যের ভান্ডার মনে হলেও এর ভেতরটা অন্তঃসারশূন্য। যেখানে প্রয়োজনীয় তথ্যের তেমন কিছুই নেই। এসাইনমেন্ট, টার্মপেপার, প্রজেক্ট ও গবেষণাপত্রে শিক্ষকদের পদবি উল্লেখ করতে হয়। 

এক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের সাহায্য নিয়ে থাকে। রিপোর্টে পদবি ভুল করায় মনঃক্ষুণ্ন হন শিক্ষকরা। অভিযোগ রয়েছে- আধুনিকায়নের অভাবে চুয়েটের ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায় না।

এদিকে স্নাতক পর্যায়ে চলমান বেশ কয়েকটি বিভাগে নেই বিজ্ঞপ্তি সেকশন। কোনো কোনো বিভাগে থাকলেও হয় না নিয়মিত হালনাগাদ। স্নাতকোত্তর কোর্সের ক্ষেত্রেও একই দশা। চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগ, পানি সম্পদ কৌশল বিভাগ, পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (পিএমই), নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, মেটেরিয়াল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং স্থাপত্য বিভাগের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি পাতায় নেই কোনো তথ্য।
 
অন্য দিকে বেশ কিছু বিভাগে নোটিশ থাকলেও প্রায় সবগুলোই অনেক পুরাতন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত পাতায় গুটিকয়েক তথ্য থাকলেও অভাব রয়েছে নিয়মিত হালনাগাদের। পদন্নোতি পেলেও পদবি আগের মতো রয়েছে। হয়নি পরিবর্তন। যার ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। 

এছাড়া বেশিরভাগ শিক্ষকমণ্ডলীর ব্যক্তিগত তথ্য চার্টে নেই গবেষণা পত্রের তালিকা, যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা বিস্তারিত তথ্য। বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী চুয়েট শিক্ষার্থীদের গবেষণার বিষয়বস্তু ও প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়কের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে যখন চুয়েট ওয়েবসাইটই ভরসা সেখানেই নেই প্রয়োজনীয় তথ্য। এতে নানান জটিলতা পড়তে হয় অনেক শিক্ষার্থীকে।

একাডেমিকের পাশাপাশি লাঙ্গুয়েজ সেন্টার (এলসি) রিভার হার্বার ও ল্যান্ডসাইট রিসার্চ (সিআরএইচএলআর), সেন্টার ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রবলেম রিসার্চ (সিআইপিআর), সেন্টার ফর ইনভাইরোনমেন্ট সায়েন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং রিসার্চ (সিইএসইআর) এবং ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং এন্ড কমট্রাকশন (বিআরটিসি) নিয়ে গঠিত পাঁচটি সেন্টারের সিইএসইআর বাদে বাকি চারটির ওয়েবসাইট যেন মৃতপ্রায় অবস্থা। পাঁচটি ইনস্টিটিউটের মধ্যে আবার ইনকিউবেটর চার্টে নেই কোনো বিজ্ঞপ্তি, রিসার্চ এন্ড এক্সটেনশনে নেই কোনো পাতা। বাকি তিনটির হালনাগাদ হয়েছে দীর্ঘ সময় আগে।

এছাড়াও চুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত অ্যালামনাইয়ের বিভিন্ন শাখাগুলোতেও নেই পর্যাপ্ত তথ্য। হালনাগাদের অভাবে দেশ ও বিদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য সেবাপ্রত্যাশীদের পড়তে হয় নানান বিড়ম্বনায়। পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যারা র‌্যাংকিং নিয়ে কাজ করে তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য না পাওয়ায় বিশ্ব র‌্যাংকিং প্রতিযোগিতায় চুয়েটকে পেছনে ফেলছে বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের। 

একাডেমিক ও বিভাগ সমূহ ছাপিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তর, নিরাপত্তা শাখা, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর, মেডিকেল স্বাস্থ্য শাখা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর, প্রকৌশল দপ্তর শারীরিক শিক্ষা বিভাগ এবং তথ্য প্রযুক্তি বিভাগসহ বেশ কয়েকটি শাখা। প্রায় একই অবস্থা অন্যান্য পাতাগুলোতেও। 

চুয়েটের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের ওয়েবসাইটের পাতায় গিয়ে দেখা যায় নেই কোনো বিজ্ঞপ্তি। যেখানে প্রতিনিয়ত দপ্তর হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান কার্যক্রমে নোটিশ প্রদান করে থাকে কর্তৃপক্ষ , যার একটিও নেই ওয়েবসাইটে। প্রকৌশলে চার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চুয়েটের ওয়েবসাইটে এমন করুন অবস্থায় শঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

যন্ত্রকৌশল বিভাগের সমাপনী বর্ষের শিক্ষার্থী আশহার ইনতেযাম তাহবির বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চুয়েটের ওয়েবসাইট এবং ই-সেবা যেরকম আমরা আশা করি তেমন ইন্টারেক্টিভ এবং ডায়নামিক না। দেশের কিছু মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত  ক্লাসরুম ও দাপ্তরিক কাজে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। বিভিন্ন দপ্তর, শাখা, বিভাগ ও হলের নোটিশসমূহ ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়না। তাছাড়া গবেষণা পত্র, প্রকাশনা ও চুয়েটে হওয়া ভালো কাজসমূহের কোনো সুসজ্জিত আর্কাইভ ও নেই। ওয়েবসাইটের আধুনিকায়ন ও পর্যাপ্ত তথ্য সংযোজন ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। এই কাজে শিক্ষার্থীদের ফিডব্যাক ও বিভিন্ন প্রজেক্টে সংযুক্ত করা যেতে পারে।

পুরকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সৌভিক দেব এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেখানে পুরো বিশ্ব এখন অনলাইন নির্ভর সেখানে একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট এমন হবে সেটা অবশ্যই কাম্য নয়। প্রয়োজনীয় অধিকাংশ বিজ্ঞপ্তিই খুঁজে পাওয়া যায় না আমাদের ওয়েবসাইটে।

 চুয়েটের ওয়েবসাইটের দেখভাল ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) বিভাগ। বিভিন্ন তথ্য ও বিজ্ঞপ্তিগুলো হালনাগাদের গুরু দায়িত্ব এ শাখার, যদিও ওয়েবসাইটে এ শাখায় সর্বশেষ হালনাগাদ করা হয় ২০২২ সালে শেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে। 

জানতে চাইলে চুয়েট আইসিটির পরিচালক ও কম্পিউটার বিজ্ঞান কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান বলেন, গত কয়েকদিন যাবত আমাদের কিছু অবকাঠামোগত পরিবর্তন এসেছে। কয়েকটি বিভাগের নামও পরিবর্তন হয়েছে ৷ উপরন্তু ভর্তি পরীক্ষা আমাদের ব্যস্ততাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। 

ওয়েবসাইট আপডেটের বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, আশা করছি, দ্রুতই সব বিষয়গুলো একত্রিত করে আমরা একটি আপডেট সাইট দিতে পারবো। আর, থিসিস ও গবেষণাপত্রগুলো লাইব্রেরি থেকে দেয়ার কথা, তবে তাদের যদি কোনোরকম টেকনিক্যাল সাহায্য প্রয়োজন হয়, অবশ্যই আমরা সেই সাপোর্ট প্রদান করবো। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের সাহায্য আমরা প্রত্যাশা করছি। তারা যদি তাদের চাহিদাগুলো লিখিত আকারে আমাদের কাছে উপস্থাপন করে, তাহলে কাজটা আমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে ওয়েবসাইট দেখাশুনা করা। স্ব স্ব বিভাগ বা ইনস্টিটিউট যদি তথ্য প্রদান না করে তবে আমাদের কিছু করার থাকে না। শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও উনাদের তথ্য উনারাই হালনাগাদ করবেন। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ডাটাবেজ তৈরির বিষয়ে আইআইসিটিতে এর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় নি। অনুষদ ও বিভাগগুলো ডাটাবেজ তৈরি করে দিলে আমরা ওয়েবসাইটে যুক্ত করতে পারবো।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক শেখ মুহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো মতামত পাওয়া যায় নি।


সর্বশেষ সংবাদ