প্রতিপক্ষের হামলায় শিকার ববি শিক্ষার্থী

‘ছাত্রলীগ করতে এসে আমি পঙ্গু হতে চলেছি’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ববি ছাত্রলীগ নেতা আয়াত উল্লাহ
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ববি ছাত্রলীগ নেতা আয়াত উল্লাহ  © ফাইল ছবি

‘ছাত্রলীগ করতে এসে আমি পঙ্গু হতে চলেছি’—মন্তব্য করেছেন নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীদের দ্বারা হামলার শিকার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়াত উল্লাহ। ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের সামনেই ছাত্রলীগের মাস্ক ও হেলমেট পরা একদল অস্ত্রধারী কর্তৃক হামলার শিকার হয়েছেন এই ছাত্রলীগ কর্মী।

গত ৫ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টার পর তার উপর এই নৃশংস হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। ক্ষোভ প্রকাশ করে আয়াত বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই আমি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সর্বশেষ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে দিনরাত পরিশ্রম করেছি। দলের পক্ষে নগরবাসীর দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চেয়েছি। ছাত্রলীগ করতে এসে আজ আমি পঙ্গু হতে চলেছি। প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়েছি। রাজনীতি না করলে হয়তো এমন হতো না।’

আরও পড়ুনঃ কোচিংয়ের আড়ালে ১৬ বছরে ১০ বার মেডিকেলে ভর্তির প্রশ্নফাঁস

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আয়াত উল্লাহ। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে। ছাত্রলীগের অপর একটি পক্ষের হয়ে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতেন তিনি। এক সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে।

হামলার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে আয়াত বলেন, ‘৫ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু হলে আমার সহপাঠীদের ওপর হামলা হয়েছে, খবর পেয়ে আমি হলের দিকে যাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মন্দিরের সামনে পৌঁছানোমাত্রই হেলমেট ও মাস্ক পরা ৭-৮ জন তরুণ আমার পথ রোধ করে এলোপাতাড়ি পেটাতে ও কোপাতে শুরু করেন। আমি দৌড়ে পালাতে গেলে ৩-৪ জন আমাকে জাপটে ধরেন। একজন আমার পায়ের রগ কেটে দেন। আমি চারদিকে কেবল অন্ধকার দেখছিলাম। পরে কীভাবে কারা হাসপাতালে এনেছেন, তা বলতে পারছি না।’

বিশ্ববিদ্যালয় হামলারকারীদের মদদ দিচ্ছে উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আয়াত উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘রামদা, চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্র দিয়ে বহিরাগতদের সহায়তায় আমার ওপর হামলা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কেউই হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে এগিয়ে আসেননি। উল্টো এখন শুনছি, হামলাকারীদের মধ্যে যাঁরা শিক্ষার্থী ছিলেন, তাঁরা হলের বিভিন্ন কক্ষ দখল করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁদের মদদ দিচ্ছে। আমি মামলার জন্য থানায় অভিযোগ দিলেও অদৃশ্য কারণে পুলিশ মামলা এজাহারভুক্ত করেনি।’

আয়াত আরও বলেন, আমাকে আহত করা হয়েছে। এখন উল্টো আমার ওপর অভিযোগ আনা হচ্ছে। এগুলো সবই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে হচ্ছে আমার। এই হামলার ঘটনায় তিনি ছাত্রলীগের আরেক পক্ষের নেতা তানজিদ মঞ্জুকে দায়ী করেন। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা। তিনি বলেন, ‘ওই রাতের ঘটনায় আমি নিজেই ভিকটিম। আমাকে আহত করা হয়েছে। এখন উল্টো আমার ওপর অভিযোগ আনা হচ্ছে। এগুলো সবই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে হচ্ছে আমার।’

মধ্যরাতে হামলা করে হলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা পক্ষটি বরিশাল সিটির বিদায়ী মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী হিসেবে পরিচিতবলে জানান  আহত ছাত্রলীগের কর্মীরা। তারা বলেন, দীর্ঘদিন হলগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে সিটি নির্বাচনে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ জিতে যাওয়ায় তারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। তখন হলগুলো পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত পক্ষটি নিয়ন্ত্রণ নেয়। দেড় মাসের মাথায় হল নিজেদের দখলে নেন সাদিকপন্থীরা।

ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন বলেও জানিয়েছেন আয়াত। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক আমাকে বলেছেন যে উন্নত চিকিৎসা পেলে ৬ থেকে ৮ মাস পর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরতে পারব। কিন্তু আমার সঙ্গী হবে হুইলচেয়ার। আমার পরিবার নিম্নমধ্যবিত্ত। চিকিৎসার এত ব্যয় বহন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটাব, সেটা ভেবে অসহায় লাগছে।’

আয়াতকে চিকিৎসা করা ইন্টার্ন চিকিৎসক মো. সাঈদ বলেন, ‘পায়ের যে রগগুলোর শক্তিতে আমরা দাঁড়িয়ে থাকতে পারি, আয়াতের বাঁ পায়ের তেমন একটি রগ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। চার থেকে পাঁচ মাস তাঁকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। এরপর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে একটা অস্ত্রোপচার করতে হবে। তারপর বলা যাবে, তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবেন কি না।’

আয়াতের মামলা না নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ আর মুকুল বলেন, ওই হামলার ঘটনায় একাধিক পক্ষ কয়েকটি অভিযোগ দিয়ে গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। বিচার-বিশ্লেষণ শেষে মামলা নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা হাসপাতালে গিয়ে আহত শিক্ষার্থীর খোঁজ নিয়েছি। প্রয়োজনে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছি। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে এমন মন্তব্য দুঃখজনক ও অযৌক্তিক।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence