মুদ্রা ব্যবস্থার কালো দিবসের ৫০ বছর পূর্তি

লেখক মোহাইমিন পাটোয়ারি
লেখক মোহাইমিন পাটোয়ারি  © ফাইল ফটো

১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট, দিনটি ছিল রবিবার। টিভি স্ক্রিনে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন আবির্ভূত হলেন। অত্যন্ত জরুরী একটি ঘোষণা নিয়ে। কেউ ভাবতেও পারেনি কি ঘোষণা আসতে যাচ্ছে। খুব গম্ভীর মুখে স্ক্রিপ্ট পড়তে পড়তে তিনি জানিয়ে দিলেন আজকে থেকে স্বর্ণের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হল। সে একটি খবর পৃথিবীর সবাইকে এত অবাক করেছিল যে সিদ্ধান্তটি `নিক্সন শক' হিসেবে খ্যাত।

অর্থনীতির ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এই দিনটির ২০২১ সালের ১৫ ই আগস্ট ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে। কিন্তু ঘটেছিল সেইদিন? চলুন, বিস্তারিত জানতে ঘুরে আসা যাক ইতিহাসের পাতা থেকে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং অন্যান্য ইওরোপীয় রাষ্ট্রসমূহ যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে বিপুল অংকে ঋণ নিয়েছিল। পরবর্তীতে সেই ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে তাদের স্বর্ণের মজুদ একেবারেই কমে যায়। এর ফলে তাদের জন্য স্বর্ণ ভিত্তিক মুদ্রা ব্যাবস্থা ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৪ সালে আমেরিকার নিউ হ্যাম্পশায়ার এর ব্রেটন উডস নামক স্থানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী একমাত্র মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্বর্ণ মজুদ থাকবে (প্রতি আউন্সে ৩৫ ডলার) এবং বাদ বাকি সকল মুদ্রার মান মার্কিন ডলার এর বিপরীতে নির্ধারিত হবে। এই চুক্তির ফলে আমেরিকা ব্যাতিত সকল রাষ্ট্রের জন্য স্বর্ণের মজুদ ডলার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। অর্থাৎ, ডলারই হয়ে দাঁড়ায় সোনার বিকল্প। এভাবেই ডলার আন্তর্জাতিক "রিসার্ভ কারেন্সি" বা মজুদ মুদ্রা তে রুপ লাভ করে।

কিন্তু আমেরিকা তার কথা রাখেনি। অতিরিক্ত ডলার ছাপানোর ফলে স্বর্ণের বিপরীতে ডলারের দাম পড়তে থাকে। এমনকি ১৯৭১ সালে এসে তা আউন্সে ২০০ ডলারে এসে পৌঁছে।

এরই প্রেক্ষিতে ইউরোপের দেশ গুলো অসন্তুষ্ট হতে থাকে। তখন তারা তাদের কাছে মজুদকৃত ডলার ভাংগিয়ে সোনা দাবি করে বসে। ফ্রান্স ডলার ভাংগিয়ে নিরাপদে সোনা নেওয়ার জন্য আমেরিকাতে একটি যুদ্ধ জাহাজ পাঠায়। তখনই পৃথিবীকে অবাক করে ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট, তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন স্বর্ণের মজুদ ব্যাবস্থা বিলুপ্ত ঘোষণা করে।

এই ঘোষণার ফলে মার্কিন ডলার এবং তার সাথে সাথে পৃথিবীর সকল মুদ্রা ফিয়াট কারেন্সি তে রুপ লাভ করে, অর্থাৎ বর্তমানে কোন মুদ্রার বিপরীতে মূল্যবান সম্পদ বরাদ্দ নেই। মুদ্রা নিজেই নিজের মুল্যমান।

লেখক:নরওয়ে স্কুল অফ ইকোনোমিক্সমানহাইম বিসনেস স্কুল, জার্মানি

mohaiminpatwary@gmail.com


সর্বশেষ সংবাদ