কেন বেতন পাননি কাঁকড়া ফার্ম শ্রমিকরা- সাকিবের স্ট্যাটাস
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২০, ০৯:২৯ AM , আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২০, ১০:৫৯ AM
চার মাসের বেতন না পেয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনীতে অবস্থিত সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেডের শ্রমিকদের আন্দোলন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। একইসঙ্গে নিজের ফান্ড থেকে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। গত সোমবার সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে আন্দোলন করায় র্যাবের একটি টহল টিম শ্রমিকদের হটিয়ে দেয়।
আজ বুধবার স্ট্যাটাসে সাকিব আল হাসান লিখেছেন, আমি দেরিতে প্রতিক্রিয়া জানান জন্য ক্ষমা চাইতে চাই। তবে আমার চিন্তাভাবনা এবং সমস্ত প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করতে চেয়েছিলাম যাতে সত্যটি আপনাদের সকলের কাছে প্রকাশ করতে পারি। যদিও আমার নামটি সরাসরি প্রশ্নে অ্যাগ্রো ফার্মের সাথে সম্পর্কিত, পেশাদার ব্যস্ততার কারণে আমার অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মতো এটিও অংশীদারদের দ্বারা পরিচালিত হয়। আমি এই ব্যবসায়ের দৈনন্দিন বিষয়গুলিতে জড়িত হওয়ার এমনকি অফিস পরিদর্শন করার খুব কমই সুযোগ পাই।
আপনারা সবাই জানেন যে আমাদের দ্বিতীয় সন্তানের জন্য চলতি বছরের বেশিরভাগ আমি বাংলাদেশ থেকে দূরে ছিলাম এবং এই সময়ের মধ্যে আমি আমার কৃষি ফার্মের ব্যবসায়িক বিষয়গুলি নিয়ে মোটেও আপডেট হইনি। এমনকি শ্রমিকদের বিক্ষোভের বিষয়টিও সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেছি। সেখানে গত কয়েক মাস ধরে যা চলছে তা আমাকে সঠিকভাবে জানাতে ব্যর্থ হয়েছিল কোম্পানির অংশীদার ও কর্মচারীরা। এছাড়া বেশিরভাগ কর্মচারীদের জানুয়ারির শেষের দিকে কর্মবিরতি দেওয়া হয়েছিল। কিছু সংখ্যককে আগামী ৩০ এপ্রিল বকেয়া বেতন পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। ওই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজি হওয়া সত্ত্বেও, এই কর্মচারীরা আশ্চর্যরকমভাবে রাস্তায় নেমেছিল এবং এর পেছনে কিছু লোকের গোপন এজেন্ডা এবং খারাপ অভিপ্রায় ছিল।
যাইহোক, আমি বুঝতে পারি যে সেখানে একটি গুরুতর সমস্যা রয়েছে, আমি নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সমস্ত বকেয়া বেতন প্রদানের এবং কোম্পানির তহবিল বা সহ-মালিকদের কোনও সহায়তা ছাড়াই সম্পূর্ণ দায়বদ্ধ হয়ে পরিস্থিতি সমাধান করেছি। এছাড়া এটি কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ব্যাপার ছিল যা নিজেদের মধ্যে সমাধান হওয়া উচিত ছিল। কর্মীরা প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও মাসের শেষ অবধি অপেক্ষা করতে ব্যর্থ দেখে আমি খুব হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। অন্য অনেকের মতো আমিও তাদের মতো অন্যান্য লোকদের জন্য তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছি যারা বর্তমান করোনা সংকটে দুরবস্থায় রয়েছেন। আর আমাদের মুষ্টিমেয় কিছু কর্মচারীকে বঞ্চিত করব কেন? এটি তারা কেমনে বুঝলো তা দেখে হতবাক হই।
এর আগে সাকিব আল হাসানের কাঁকড়া খামার প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক ক্রিকেটার সগীর হোসেন পাভেল বলেন, সুন্দরবনের কোলঘেঁষা ঘূর্ণিঝড় আইলায় বিধ্বস্ত এলাকা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী। এই এলাকার মানুষ খুব অবহেলিত। এখানকার মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ২০১৬ সালে এই খামারটি করার সিদ্ধান্ত নেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। বিগত চার বছর ধরে এসব শ্রমিকের সঙ্গে কাজ করছি। কখনও কোনও সমস্যা হয়নি। তারপর হঠাৎ কেন তারা আন্দোলনে গেলো সেটা বুঝতে পারলাম না। বিষয়টিতে আমি হতবাক হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও আমেরিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে আমাদের অনেক অর্ডার ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেগুলো বাতিল করেছে তারা। এ কারণে আমরা একটু সমস্যায় পড়েছি। ৩০ তারিখের মধ্যে বেতন শোধ করার ব্যাপারে শ্রমিকদের সঙ্গে আগেই কথা বলেছিলাম এবং তারা এতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু তারা কেন হঠাৎ ২০ তারিখে আন্দোলন করলো বুঝতে পারলাম না।
তিনি বলেন, জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সব শ্রমিকের বেতন পরিশোধ আছে। বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির কারণে ফেব্রুয়ারি থেকে ফার্মের কাজ সীমিত করি। এখান থেকে কাঁকড়া প্রসেসিং করে বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। পণ্য রফতানি করে বেতন পরিশোধের টার্গেট নিয়েছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে রফতানি করা সম্ভব হচ্ছিল না। সে কারণে আগে যেখানে ২শ’ শ্রমিক কাজ করতো সেখানে মাত্র ৩০ জন নিয়ে কাজ করছিলাম।
তিনি আরও বলেন, বেতন বকেয়ার বিষয় সাকিব জানতেন না। তবে তিনি জানতেন আমাদের অনেক প্রডাক্ট রফতানির অপেক্ষায় পড়ে আছে। সাকিবই বলেছিলেন করোনার কারণে ফেব্রুয়ারি থেকে ফার্ম বন্ধ করতে। তবে এই ঘটনার পরে বিষয়টি সাকিবকে জানিয়েছি। তিনি দ্রুত সমাধান করতে বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে কেউ এটা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছি। ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময় নিলেও আগামীকালই (বুধবার) শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করে দেবো। এই খামারটি সাকিব আল হাসানেরই। আমরা কয়েকজন বিষয়টি দেখাশোনা করি। করোনা পরিস্থিতির কারণে আশপাশের অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা এখনও ধরে ছিলাম। তার মধ্যে এই পরিস্থিতি।