দেশীয় স্বাস্থ্য সেবায় আস্থা ফেরাতে কাঠামোগত সংস্কার ও কার্যকর প্রয়োগ জরুরি: ঢাকা চেম্বার সভাপতি

‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতে আস্থা বৃদ্ধি; মান নিয়ন্ত্রণে কৌশলগত কাঠামো নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে
‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতে আস্থা বৃদ্ধি; মান নিয়ন্ত্রণে কৌশলগত কাঠামো নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে  © সংগৃহীত

দেশীয় স্বাস্থ্য সেবায় আস্থা বৃদ্ধিতে কাঠামোগত সংস্কার এবং বিদ্যমান নীতিমালার কার্যকর প্রয়োগের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ। তিনি বলেন, মানসম্মত ও রোগীবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বয় জোরদার এবং শক্তিশালী হেলথ রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে তোলা অপরিহার্য।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর ২০২৫) ডিসিসিআই আয়োজিত “বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতে আস্থা বৃদ্ধি; মান নিয়ন্ত্রণে কৌশলগত কাঠামো নিশ্চিতকরণ” শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান।

সেমিনারে আলোচকরা বলেন, স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির মাত্র ১ শতাংশ বরাদ্দ, অপ্রতুল অবকাঠামো, নতুন প্রযুক্তির সীমিত ব্যবহার, দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি, উচ্চ ব্যয়, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং নীতিমালার তদারকির অভাবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। তাই এ খাতের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বাড়ানোর পাশাপাশি জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা।

স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, সরকারি ও বেসরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবার মানে বৈষম্য, অনুমোদনহীন ক্লিনিক ও ফার্মেসির বিস্তার, ভুল ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট, ভুয়া ওষুধ এবং দুর্বল তদারকি জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি জানান, কার্যকর স্বাস্থ্য বিমা ব্যবস্থা না থাকায় দেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় ৭৪ শতাংশই মানুষকে নিজস্ব খরচে বহন করতে হয়, যা নিম্ন ও মধ্য আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য বড় আর্থিক ঝুঁকি। এ অবস্থায় বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি ব্যবহার, নার্সিং ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় দক্ষ জনবল গড়ে তোলা এবং নীতিমালার বাস্তবায়ন জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, স্বাস্থ্য খাতে কিছু অর্জন থাকলেও সামগ্রিক মান এখনও প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তিনি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ওপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় বিকেন্দ্রীকরণ ও ডিজিটাল হেলথ কেয়ারের সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্ব দেন। একই সঙ্গে চিকিৎসা শিক্ষাক্রম আধুনিকায়ন ও গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধির আহ্বান জানান তিনি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনাইটেড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডিসিসিআইয়ের প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী। তিনি জানান, দেশে জনপ্রতি বাৎসরিক স্বাস্থ্য ব্যয় মাত্র ১ হাজার ৭০ টাকা এবং প্রায় ৪৯ শতাংশ মানুষ মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। যদিও দেশের স্বাস্থ্য খাতের বাজার বর্তমানে প্রায় ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০৩৩ সালে ২৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রতিবছর প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ, অবকাঠামো উন্নয়ন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং নীতিমালা যুগোপযোগী করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

অনুষ্ঠানের আলোচনায় বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা সরকারি হাসপাতালের মানোন্নয়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, পিপিপি মডেলের ব্যবহার, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় জোর, দীর্ঘমেয়াদি টেকসই স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন এবং নীতিমালার কঠোর প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।

সেমিনারে ডিসিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি হায়দার আহমদ খান, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দসহ সরকারি-বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence