কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বিপ্লব: উৎপাদনে গতি, একরে সাশ্রয় ৮ হাজার টাকা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৬ PM , আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১০:০০ PM
দেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে অভাবনীয় অগ্রগতি হয়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। এর ফলে শুধু কৃষকের উৎপাদন খরচই কমেনি, বেড়েছে জমির ব্যবহার, উৎপাদনশীলতা এবং সময়ের সাশ্রয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, আগে সনাতন পদ্ধতিতে প্রতি একর জমিতে খরচ হতো প্রায় ১৪ হাজার ৪০০ টাকা। এখন কম্বাইন্ড হারভেস্টার ব্যবহারে সেই খরচ নেমে এসেছে মাত্র ৬ হাজার টাকায়। আধুনিক কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের ফলে বর্তমানে প্রতি একরে কৃষকের সাশ্রয় হচ্ছে গড়ে ৮ হাজার টাকা।
যান্ত্রিকীকরণে দ্রুত অগ্রগতি
২০১৯ সালে দেশে কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটার হার ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প চালুর পর তিন বছরের ব্যবধানে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ শতাংশে। ধান রোপণের রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের ব্যবহার বেড়ে হয়েছে প্রায় ৬ শতাংশ, রিপার যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে ১৮৫ শতাংশ, সিডার যন্ত্র ৬৯৭ শতাংশ, পাওয়ার থ্রেসার ১৯৩ শতাংশ এবং মেইজশেলার ২১ শতাংশ।
যান্ত্রিকীকরণের কারণে ফসলের নিবিড়তা বেড়েছে ১০ শতাংশ, আর সংগ্রহত্তোর অপচয় কমেছে ৮ শতাংশ। এক সময় যেখানে একটি জমিতে এক মৌসুমে একটি ফসল হতো, এখন সেখানে দুই বা তিনটি ফসল ঘরে তোলা যাচ্ছে। গত আমন ও বোরো মৌসুমে কাটা ধানের অপচয় ১০ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২ শতাংশে। এর ফলে সংরক্ষিত অতিরিক্ত ধানের পরিমাণ প্রায় ৪.১৩ লাখ টন, যার বাজার মূল্য ১ হাজার ১৮ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: ঘিরে রেখেছে এসপি অফিস, মাইকিং করে লোক জড়ো করা হচ্ছে
২০১০-২০১৯ সালের মধ্যে যেখানে ১১ বছরে ৭২ হাজার ৬৭৫টি কৃষিযন্ত্র বিতরণ করা হয়েছিল, সেখানে বর্তমান প্রকল্পের তিন বছরেই বিতরণ হয়েছে ৩৫ হাজার ৩৫৯টি যন্ত্র। এর মধ্যে রয়েছে ৮ হাজার ৯১২টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার, ২ হাজার ৩২৯টি রিপার, ৩৭১টি রাইস ট্রান্সপ্লান্টারসহ ১২ ক্যাটাগরির যন্ত্র।
কৃষিযন্ত্রের বাজারে প্রতিযোগিতা
যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশে কৃষিযন্ত্র ব্যবসাতেও এসেছে পরিবর্তন। আগে যেখানে মাত্র ১৪টি কোম্পানি এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল, এখন সেখানে ৪০টি কোম্পানি কাজ করছে। এতে প্রতিযোগিতা তৈরি হওয়ায় কৃষকরা সঠিক দামে যন্ত্র কিনতে পারছেন এবং খুচরা যন্ত্রাংশের চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে।
ভবিষ্যতের প্রস্তুতি
সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচালিত এই প্রকল্প কৃষিতে মনুষ্যশক্তির ঘাটতি পূরণ, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ গ্রামীণ শ্রমশক্তির কৃষি নির্ভরতা ৪০ শতাংশ থেকে কমে ২০ শতাংশে নামার পূর্বাভাস রয়েছে। সে লক্ষ্য সামনে রেখেই যান্ত্রিকীকরণকে আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, যন্ত্রের বিক্রয়োত্তর সেবা আরও সহজ করতে উপজেলা পর্যায়ে যন্ত্র সংরক্ষণ কেন্দ্র তৈরি, হটলাইন চালু এবং অনলাইন ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। ফলে কৃষকের যন্ত্র সংক্রান্ত সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করা সম্ভব হবে।