ভাইফোঁটা কেন হয়, জানেন?

ভাইফোঁটার জন্য বরণডালা সাজিয়ে ভাইকে আরতি করা হয়
ভাইফোঁটার জন্য বরণডালা সাজিয়ে ভাইকে আরতি করা হয়

ভাইফোঁটা। বাংলাদেশে হয়তো এর চল কম; কিন্তু আজ ৯ নভেম্বর গোটা ভারতজুড়ে পালিত হলো এই উৎসব। চিরন্তন সম্প্রীতির উৎসব এই ‘ভাইফোঁটা; যার পোষাকি নাম ‘ভ্রাতৃদ্বিতীয়া’। ভাই-বোনের ভালবাসার বন্ধন অনন্তকাল অটুট রাখার জন্যই বংশপরম্পরায় এই বিশেষ উৎসব পালিত হয়। চলুন এর ইতিহাস জানা যাক-

 

বাংলাদেশ কিংবা কলকাতায় যা ভাইফোঁটা বা ভ্রাতৃদ্বিতীয়া; উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে তা ভাই দুজ। দক্ষিণ ভারতে যমদ্বিতীয়া। মহারাষ্ট্র গুজরাতে ভাই বিজ। সেটাই আবার নেপালে ভাই টিকা। এই উৎসবের আরও একটি নাম হল ‘যমদ্বিতীয়া’। বাঙ্গালী হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, এই উৎসব কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ২য় দিন (কালীপুজোর দুদিন পরে) উদযাপিত হয়। মাঝে মধ্যে এটি শুক্লপক্ষের ১ম দিনেও উদযাপিত হয়ে থাকে।

ভাইফোঁটার দিন ভাইয়ের হাতে রাখি পরিয়ে দেওয়ার সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক ঘটনার সম্পর্ক আছে। ১৩১২ বঙ্গাব্দে বা ১৯০৫ সালে গভর্নর জেনারেল লর্ড কার্জনের আমলে বঙ্গভঙ্গ আইন পাস হলে তার প্রতিবাদ এবং সৌভ্রাতৃত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে ৩০ আশ্বিন দুই বঙ্গের লোকদের হাতে হলুদ সুতার রাখি পরিয়ে দেওয়া হয়, যা ‘রাখিবন্ধন’ উৎসব নামে পরিচিতি লাভ করে। এর মন্ত্র হলো: ‘ভাই ভাই এক ঠাঁই।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এতে নেতৃত্ব দেন।

অবশ্য এর নেপথ্যে পৌরাণিক দুটি কাহিনী আছে। কোথাও বলা হয়, নরকাসুরকে বধ করে এইদিন বোন সুভদ্রার কাছে গিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। সুভদ্রা দাদাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ফুল-মিষ্টান্ন দিয়ে। আরতিও করেছিলেন। প্রচলিত অন্য কাহিনী হলো, যমরাজ গিয়েছিলেন বোন যমুনার কাছে। যমুনা বা যমীও এইভাবে অগ্রজকে বরণ করে নিয়েছিলেন। সেই থেকে সহোদরের মঙ্গলকামনায় প্রবর্তিত ভ্রাতৃদ্বিতীয়া।

ফোঁটা বা তিলকদানের জন্য ব্যবহার করতে হয় বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুল

 

আরেকটি সূত্রে জানা যায়, একদা প্রবল পরাক্রমশালী বলির হাতে বিষ্ণু পাতালে বন্দি হন। দেবতারা পড়েলেন মহা বিপদে, কারন কোন মতেই তাঁরা নারায়ণকে বলির কবল থেকে মুক্ত করতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত এগিয়ে এলেন স্বয়ং লক্ষ্মী। তিনি বলিকে ভাই হিসেবে স্বীকার করেন। সেই উপলক্ষে তাঁর কপালে তিলক এঁকে দেন। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তখন স্বীকার করে বলি লক্ষ্মীকে উপহার দিতে চাইলে লক্ষ্মী চেয়ে নেন ভগবান বিষ্ণুকে। সেই থেকেই ভাইফোঁটা উৎসবের সূচনা

ভাইফোঁটা এমন এক উত্‍সব যেখানে ব্রাহ্মণ পুজারীর দরকার হয় না। তবু বিশেষ না হলেও এর জন্যেও আছে কিছু রীতি রেওয়াজ। ভোরে স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্রে ফোঁটা দেওয়া নেওয়াই রেওয়াজ। ফোঁটাগ্রহণের আগে উপবাস রাখা হয়। ফোঁটা বা তিলকদানের পর্ব মিটলে ভঙ্গ করা হয় উপবাস।

পৌরাণিক ব্যাখ্যা বা কাহিনি যাই থাকুক না কেন, বর্তমানে ভাইফোঁটা একটি সামাজিক উৎসব। এই উৎসবে এক দিকে যেমন পারিবারিক সম্পর্কগুলো আরও পোক্ত হয়, অন্য দিকে সূচিত হয় নারীদের সামাজিক সম্মান। তাই, ভাইফোঁটার ধর্মীয় গুরুত্ব অপেক্ষা সামাজিক ও পারিবারিক গুরুত্ব অনেক বেশী, যেখানে ভাই-বোনের মধ্যেকার প্রীতি ও ভালোবাসার স্বর্গীয় সম্পর্কটিই মূখ্য।

ভাইফোঁটার দিন বোনেরা তাদের ভাইদের কপালে চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দিয়ে ছড়া কেটে বলে-

“ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা,
যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা,
আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা॥

যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে
যম হল অমর।
আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে
আমার ভাই হোক অমর॥”

এইভাবে বোনেরা ভাইয়ের দীর্ঘজীবন কামনা করে। তারপর ভাইকে মিষ্টি খাওয়ায়। ভাইও বোনকে কিছু উপহার বা টাকা দেয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence