শুধু যুবলীগ ধরলে হবে না, ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করুন: ভিপি নুর

  © টিডিসি ফটো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছেন, সেই অভিযানে শুধু যুবলীগকে ধরলে হবে না, ছাত্রলীগকেও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে ছাত্রলীগ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষতির কারণ হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি (সহ-সভাপতি) নুরুল হক নুর।

আজ বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় আয়োজিত গণরুম-গেস্টরুম সমস্যা নিয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের উম্মুক্ত আলোচনায় তিনি একথা বলেন।

এসময় তিনি বলেন, ‘প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাগাম টেনে ধরার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। শুধু যুবলীগের শুদ্ধি অভিযান চালালে হবে না । ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। না হলে তারা আপনার ক্ষতির কারণ হবে।’

এ সময় ছাত্রলীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভুমিকা থাকা সত্বেও তারা কেন আজ শিক্ষার্থীদের ত্রাসের কারণ হবে? কেন আজ ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিতে হয়? যে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে, তারা কেন আজ নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ? শিক্ষার্থীদের ত্রাসের কারণ?’

তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্রলীগের বিশ বছরের অবদান কি? কোনো অবদান নেই। বরং শিক্ষার্থীদের কাছে তারা নিপীড়কের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। গত সাত বছরে ছাত্রলীগের হাতে ২৮২ জন শিক্ষার্থী নিপীড়নের শিকার হয়েছে।’

এসময় হল প্রশাসনের সমালোচনা করে নুরুল হক বলেন, ‘হলগুলো ছাত্র সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করলে হলের প্রশাসনের কাজ কি? ছাত্র সংসদের ধারাবাহিতকা থাকলে পরিবর্তন আসবেই। হলে হাউস টিউটর থাকেন, হল প্রাধ্যক্ষ থাকেন- তাহলে কেন একটি ছাত্র সংগঠন হলগুলো চালাবে।’

শিক্ষার্থীদের নানা নির্যাতনের সাথে ছাত্রলীগ সরাসরি জড়িত থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয় না অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘তারা ব্যবস্থা নিলেও লোক দেখানো ব্যবস্থা নেয়া হয়, লোকদেখানো বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে আবার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।’

এ সময় তিনি এসএম হলে তার ওপর লাঞ্ছনার বিষয়ে বলেন, ‘ডাকসুর ভিপি হয়ে ছাত্রলীগের হাতে এসএম হলে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছি। সেখানে হল প্রাধ্যক্ষ ছিলেন। প্রকাশ্যে আমাকে লাঞ্ছনা করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি।’

অন্যায়ের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ করার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধরনের শিক্ষার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, আপনারা যদি এর বিরুদ্ধে কথা না বলেন, আপনারা যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ না করেন, তাহলে শিক্ষার যে উপযুক্ত পরিবেশ, আমরা যে শিক্ষার পরিবেশ চাই, আমরা সেই শিক্ষার পরিবেশ পাব না। দাবি আদায়ে তাই আমাদের কথা বলতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যদি আমরা কথা না বলি তাহলে আজকে বুয়েটের যে আবরারের ঘটনা সে ঘটনা বারবার ঘটবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, প্রশাসনের সাথে ছাত্র সংগঠনের সম্পর্ক থাকা উচিত ছাত্রদের কল্যাণের জন্য। কিন্তু তারা সম্পর্ক রাখে ছাত্রবিরোধী কার্যকলাপের জন্য। সে কারণে যারা যখন ক্ষমতা থাকেন, ক্ষমতা থাকা ছাত্র সংগঠন নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।’

ডাকসু ভিপি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভাই-বন্ধু শিক্ষার্থীদের কাছে ভিন্নরূপে আবির্ভূত হয়। যে বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় মুক্ত জ্ঞানচর্চার অবাধ বিচরণ ভূমি, আজকে সেখানে ভিন্নমত পোষণ করাটা খুব কঠিন হয়ে যাবে তার জন্য, যে ভিন্নমত পোষণ করবে। আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কথা বলার স্বাধীনতা নেই, নিজের থাকার জায়গা নেই, পড়াশোনার পরিবেশ নেই। সেজন্য আজকে আমাদের কথা বলতে হচ্ছে, আজকে আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে।

উন্মুক্ত আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহবায়ক রাশেদ খান, ফারুক হাসান, মশিউর রহমান, ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেন প্রমুখ।


সর্বশেষ সংবাদ