মানসম্মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষার্থীরা কী ভাবছেন?

আজ ১ জুলাই। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯২১ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সেই হিসাবে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘গুণগত শিক্ষা, প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ’।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় যে বিশ্ববিদ্যালয় একটি দেশের জন্ম দিয়েছে। বহু জ্ঞানী-গুণী-বিজ্ঞানী আর লাখো গ্র্যাজুয়েট উপহার দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবদান চির ভাস্বর হয়ে আছে লাল-সবুজের স্বাধীন পতাকায়।

কিন্তু শত বছরের দ্বারপ্রান্তে এলেও প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে প্রত্যাশা তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

একটি প্রতিষ্ঠাকালীন আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নয়নের অগ্রগতির জন্য যে সুযোগ সুবিধা থাকার দরকার ছিল তার অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এ বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে তীব্র আবাসন সঙ্কটে শীত-বর্ষা উপেক্ষা করে হলের বারান্দায় থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আকাশচুম্বী অট্টালিকা গড়া থেমে নেই। গেস্টরুমের নির্যাতন এখনো বন্ধ হয়নি। গেস্টরুম-গণরুম নির্যাতনের জন্যে দমে যাচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীদের জীবন।

শিক্ষা-গবেষণা অনেক পিছিয়ে রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। ছাত্ররাজনীতি হারিয়েছে তার আদর্শিক ধারা। পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যাও দিনদিন কমে যাচ্ছে। গবেষণার বর্তমানে নাজেহাল অবস্থা। শিক্ষকেরা জড়িয়ে পড়ছেন গবেষণা জালিয়াতিতে। প্রতিষ্ঠাকালীন যে খোলামেলা আর সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাস ছিল তা যেন ক্রমান্বয়ে লোপ পাচ্ছে। সাধারন শিক্ষার্থীরা হারাতে বসেছে সবুজ শ্যামল সুন্দর রুচিশীল পরিবেশ।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, লাল ফিতার দৌরাত্ম, শিক্ষকদের নোংরা রাজনীতি, দায়িত্বে অবহেলার কারণে পিছিয়ে রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি।

এ বিষয়ে পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হৃদয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে প্রত্যাশা আমি মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তা পূরণ করতে পারেনি। আমরা দেখছি শিক্ষার মান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এর সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মানের অনেক পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির সুস্পষ্ট কোন বক্তব্য নেই। সরকারি কাজে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অব্যাহত রেখেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শত বছরের দ্বারপ্রান্তে এলেও এখনো প্রতিটি হলে গণরুম রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখনো আবাসন সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। ক্যান্টিনে খাবারের মান ঠিক করতে পারেনি।সবকিছু মিলিয়ে আমি মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ।

ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্র জহিরুল হক তমাল বলেন, আমি যদি আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে মন্তব্য করতে চাই তাহলে বলবো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকেই সাধারন স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে ছিল। এখনো সেই স্বপ্নদ্রষ্টা হিসাবেই হয়েছে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে আমি মনে করি না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোপুরি সক্ষমতা রয়েছে। এই ব্যর্থতা মূলত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এবং রাজনৈতিক দলের। শিক্ষকদের রাজনীতির কালো হাতের জন্যই আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নাজেহাল অবস্থা।আমার কাছে মনে হয় রাজনৈতিক বেড়াজাল থেকে যদি আমরা মুক্ত হতে পারি তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে আমাদের স্বপ্ন পূরণে পুরোপুরি সক্ষম।

ইতিহাস বিভাগের ফারুক হাসান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শত বছরের দ্বারপ্রান্তে এলেও আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যায় জর্জরিত এর অবস্থা আমরা দেখতে পাই। কিন্তু এ অবস্থার জন্য আমি শিক্ষকদের নোংরা রাজনীতিকে দায়ী করবো। যে বিশ্ববিদ্যালয় একটি দেশের জন্ম দিয়েছে আজ সে বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক র‌্যাংকি এ নাই। বিদ্যালয়ের আবাসন সমস্যা এখনো বিদ্যমান। প্রতিটি হলে এখনো গেস্টরুমের নামে নির্যাতন চলে। ক্যান্টিনের খাবারের মান এর অবস্থা খুবই খারাপ। শিক্ষা ও গবেষণায় অনেক পিছিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে স্বপ্ন ও আশা আকাঙ্ক্ষা এ বিশ্ববিদ্যালয় কে নিয়ে। তার কোনোটাই পূরণ হয় না এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।


সর্বশেষ সংবাদ