রাবি ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

মো. রাশেদ খান
মো. রাশেদ খান  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ মিয়ার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসের এক দোকান থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হল সংলগ্ন ‘গ্রামীন টেলিকম’ নামের দোকানে ঢুকে তিনি নগদ ৫০হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন বলে দাবি করছেন ভুক্তভোগী দোকান মালিক সেলিম হোসেন।

তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রাশেদ মিয়া বলছেন, তিনি দোকান মালিক সেলিম হোসেনের থেকে কোনো টাকা ছিনিয়ে নেন নি।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে শহীদ হবিবুর রহমান হল ক্যান্টিনে কর্মরত একজন মহিলা ফোনে রিচার্জ করতে আসে দোকানী সেলিমের কাছে। দোকানের দরজা খোলা থাকায় তিনি ভেতরে প্রবেশ করেন। এমতাবস্থায় শহীদ হবিবুর হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সামিউল আলম সোহাগসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী মাহিলা প্রবেশ করায় দোকানের ঝাপ নামিয়ে দেয়।

এরপর বিষয়টি তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হককে জানায়। পরে ঘটনাস্থলে প্রক্টর এসে দোকান মালিক সেলিম হোসেনকে নিজ দপ্তরে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং দোকান বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেন। পরবর্তীতে সেলিম হোসেন প্রক্টর দপ্তর থেকে বেরিয়ে আসলে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী সেলিম হোসেনকে পাশে নিয়ে গিয়ে আলাদাভাবে কথা বলেন।

আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মার্কশিটে এত ভুল!

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দোকান মালিক সেলিম হোসেন বলেন, 'মহিলাটি দোকানে এসেছিলেন ফোনে রিচার্জ করতে। দোকানের দরজা খোলা থাকায় তিনি একটু ভেতরে প্রবেশ করেন। এমতাবস্থায় হবিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সামিউল আলম সোহাগসহ কয়েকজন এসে দোকানের ঝাপ নামিয়ে দেয়। পরে জিয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ মিয়া দোকানে ঢুকে জোর করে ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।'

টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়ে অভিযুক্ত শহীদ জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ মিয়া বলেন, 'আমি দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য হলের নিচে নামি। এসময় শুনতে পাই দোকানী সেলিম ভাই এক মেয়ের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়েছে। এরপর আমি সেখানে যেতে না যেতেই প্রক্টর স্যার চলে আসেন। এরপর দোকান বন্ধ করে দেয়। এমতাবস্থায় কিভাবে আমি তার থেকে টাকা ছিনিয়ে নেব! আমি দোকানী সেলিমের কাছে  থেকে কোন টাকা নেই নি।

দোকানের ঝাপ নামানোর বিষয়ে জানতে চাইলে হবিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সামিউল আলম সোহাগ বলেন, আমি ক্লাস থেকে এসে সেলিম ভাইয়ের দোকানে গিয়ে দেখি তিনি দোকানের ভিতরে এক মহিলার সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় রয়েছেন। পরে আমার সঙ্গে থাকা অন্যরাও বিষয়টি দেখতে পায়। আমরা প্রায় ২০ মিনিট যাবত দোকানটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকার পরও মহিলাটি দোকান থেকে বের না হওয়ায়, ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন দোকানের ঝাপ নামিয়ে দিয়ে প্রক্টরকে বিষয়টি জানায়। তবে আমি দোকানের ঝাপ নামাই নি।

নাম না প্রকাশ করা শর্তে ছাত্রলীগের এক নেতা জানান, আমি নিশ্চিত জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ মিয়া সেই দোকানে প্রবেশ করে ক্যাশ থেকে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি টাকা নিয়েছে। দোকানী আপত্তিকর অবস্থায় থাকলে সেই বিচার প্রশাসন করবে। ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর এধরণের আচরণের কারণে ছাত্রলীগ আজ সমালোচিত হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, সামিউল আলম সোহাগ হবিবুর হল ক্যান্টিন থেকে নিয়মিত বাকি খেতো। নিয়মিত টাকা পরিশোধ না করায় তার সঙ্গে ক্যান্টিন মালিকের বাকবিতণ্ডাও হয়। যেহেতু সেই মহিলা হবিবুর রহমান হল ক্যান্টিনে কর্মরত। তাই পূর্বের ঘটনার জেরে পরিকল্পিতভাবে এমনটি করা হয়েছে বলে ধারণা এই ছাত্রলীগ নেতার।

এ বিষয়ে সামিউল আলম সোহাগ বলেন, ক্যান্টিনে আমার কিছু টাকা বাকি ছিল। এ নিয়ে ক্যান্টিন মালিকের সঙ্গে আমার একবার বাকবিতণ্ডাও হয়েছিল। তবে আমি পরে তা পরিশোধ করে দিয়েছি।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, দোকানে নারী ঘাটিত একটি বিষয় আমি শুনেছি। কিন্তু টাকা ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়ে আমি মাত্র শুনলাম। আমি বিষয়টির খোঁজ নিচ্ছি। ঘটনার সত্যতা পেলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিব।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, সাংবাদিকদের কাছ থেকেই টাকা নেয়ার বিষয়টি একটু আগে জানলাম। তবে এ বিষয়ে ভুক্তভোগী লিখিত কোনো অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নিবো। এছাড়া দোকানীর বিরুদ্ধে যে নারীঘটিত বিষয়ে অভিযোগ সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উপযুক্ত প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ