‘রোজায় ক্লান্ত, ইফতারের পর মেরো’ বলার পরও রক্ষা পাননি

নিহত মোর্শেদ
নিহত মোর্শেদ  © সংগৃহীত

আমি রোজা রেখেছি, একটু পর ইফতার করবো। বেশি ক্লান্ত লাগছে, ইফতার শেষ করলেই তোমরা আমায় মেরো (প্রহার করো)।’ এমন আকুতি জানিয়েও শেষ রক্ষা হলো না যুবক মোরশেদ আলী ওরফে বলী মোরশেদের (৩৮)। ইফতারের অনুষঙ্গ কেনার সময় জনসম্মুখে তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ।

বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মোরশেদ সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের মাইজপাড়ার মৃত মাওলানা ওমর আলীর ছেলে। তিনি এলাকায় ‘অন্যায়ের প্রতিবাদকারী’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

নিহতের ভাই জয়নাল আবেদীন, আইনজীবী জাহেদ আলী সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ভাই মোরশেদ ইফতারি কিনতে চেরাংঘর বাজারে যান। সেখানে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা মাহমুদুল হক, জয়নাল, কলিম উল্লাহসহ তাদের গোষ্ঠীর অন্তত ১৫-২০ জন লোক লোহার রড, ছুরি ও লাঠি নিয়ে মোরশেদের উপর হামলে পড়ে। অকস্মাৎ হামলা ও রোজায় ক্লান্ত মোরশেদ হতবিহবল হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ঘটনা প্রত্যক্ষ করা অনেকে জানিয়েছেন, তখন তিনি (মোরশেদ)- হামলাকারীদের বলছিলেন, সারাদিনের রোজায় বেশি ক্লান্ত- মারতে চাইলে ইফতারের পর মারিও। রোজায় ক্লান্ত, ইফতারের সময় দেওয়ার আকুতিতেও হামলাকারীদের মন গলেনি।

আরও পড়ুন: বেসরকারি ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সতর্ক করবে ইউজিসি

তারা মোরশেদকে মাটিতে ফেলে মধ্যযুগীয় কায়দায় প্রায় ২০মিনিট উপর্যুপরি আঘাতের পর চলে যায়। হামলাকারীরা স্থানীয় ভাবে চিহ্নিত অপরাধী হওয়ায় কেউ তাদের বাঁধা দিতে আসেনি।

পরে স্থানীয়রা মুমূর্ষু মোরশেদকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে আইসিওতে স্থানান্তর করার পর সেখানকার চিকিৎসকরা রাত ৮টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয়রা জানান, সরকারি একটি সেচ প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে ইজারা নিয়ে পরিচালনা করে আসছিল মোরশেদের পরিবার। সেই প্রকল্পের পানির স্কিম নিয়ে হামলাকারীদের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে মোরশেদ আলীর বিরোধ চলছিল। হামলাকারীরা চাষিদের ভোটে নির্বাচিত স্কিম পরিচালনাকারীদের পানির পাম্পের পাশে জোরপূর্বক নিজেদের পাম্প বসানো বা চলমান প্রকল্প দখল করতে চেয়েছিল। কিন্তু মোরশেদ তাতে বাধা দেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বিবাদ চলে আসছিল।

এদিকে, কিছুদিনের মধ্যে ওই সেচ প্রকল্প নতুন করে ইজারা হওয়ার কথা রয়েছে। ইজারা পাওয়ার জন্য মোরশেদের পরিবার আবারো আবেদন করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে প্রতিপক্ষ।

নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, মাহমুদুল হক মেম্বার, জয়নাল আবেদিন হাজারি, কলিম উল্লাহ, আবদুল মালেকসহ হামলার মূল নির্দেশদাতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা আলাল।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম আলাল, আবদুল মালেকসহ অন্য অভিযুক্তদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত সবার ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

কক্সবাজার সদর থানার ওসি শেখ মুনীর-উল-গীয়াস বলেন, খবর পেয়ে সদর হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের পৃথক টীম। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence