ছয় ছাত্রের হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দেওয়ার সর্বোচ্চ প্রয়াস হয়েছে: আদালত
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:৪৬ PM , আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:৪৬ PM
সাভারের আমিনবাজারে ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে মারার পর আসামিরা সেই হত্যাকাণ্ডকে ‘ধামাচাপা দেওয়ার সর্বোচ্চ প্রয়াস’ করেছেন বলে মামলার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে পর্যবেক্ষণ জানিয়েছেন আদালত।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, গণপিটুনির এই বায়বীয় শব্দটির মোড়কে আসামিরা তাদের নৃশংসতা, অমানবিকতা, পাশবিকতাকে ধামাচাপা দেওয়ার সর্বোচ্চ প্রয়াস চালিয়েছে। যে তাজা ছয়টি তরুণপ্রাণ এই পৈশাচিক উম্মত্ততায় ঝরে গেছে তারা মৃত্যুর পরেও সমাজের চোখে মিথ্যা ডাকাত পরিচয়ের বোঝা বহন করে চলেছে।
হত্যা মামলার প্রকাশিত ১৭৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে এসব কথা বলেন বিচারক। বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
গত ২ ডিসেম্বর আমিনবাজারে ছয় ছাত্র হত্যা মামলার সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বিচারক ইসমত জাহান।
রায়ে আমিনবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনসহ ১৩ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৫ আসামিকে খালাস এবং বিচারকালে তিন জন মারা যাওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। ওই হত্যার মামলার ১৩ আসামির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) নথি বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে এসেছে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী বিচারিক আদালতের দেওয়া কোনো মৃত্যুদণ্ডের রায় অনুমোদনের জন্য মামলার নথি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে পাঠাতে হয়। সে অনুযায়ী তাদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে এসেছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য এবং বিচারের নিয়ন্ত্রণের ভারসাম্য রক্ষার জন্য আদালত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। কিন্তু এদের পাশ কাটিয়ে স্বেচ্ছাচারীর মত আইনকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আসামিরা নির্মমভাবে পিটিয়ে ছাত্রদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। হতভাগ্য ছয় ছাত্র সেদিন পবিত্র শবে বরাতের রাত্রে ৩২ জন আসামির হাতে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। একইসঙ্গে তাদেরকে এবং তাদের হতভাগ্য পরিবারকে মিথ্যা ডাকাতির কলঙ্ক মাথায় নিয়ে সমাজে চলতে হয়েছে। তাই আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া উচিত বলে মনে করেন আদালত।
বিচারিক আদালতের দেওয়া ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, মামলায় উপস্থাপিত সমগ্র সাক্ষ্য-প্রমাণ পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, এ মামলার মৃতদের সংখ্যা ৬ জন শিক্ষার্থী। আসামিরা বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং এলোপাতাড়ি পিটিয়ে নির্মমভাবে তাদের হত্যা করেছে। ওই ছয় ছাত্রকে ঘটনাস্থলে দেখে আসামিদের মনে যদি সন্দেহের উদ্বেগ হতো, তাহলে তারা তাদের ঘেরাও করে স্থানীয় থানায় খবর দিতে পারতো। কিন্তু তারা সেটা না করে আইন নিজের হাতেই তুলে নিয়েছেন।
আদালত বলেন, একজন প্রকৃত দাগী অপরাধীরও আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগ রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া তাকে হত্যা করার কোনো অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি।
আদালতের পর্যবেক্ষণে ছয় ছাত্রের পরিবারের সামাজিক অবস্থানের কথাও উঠে এসেছে।
বিচারক বলেন, সমাজের শান্তি ও শৃংখলা বজায় রাখার জন্য এবং বিচারের নিয়ন্ত্রণের ভারসাম্য রক্ষার জন্য আদালত ও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। কিন্তু এদের পাশ কাটিয়ে স্বেচ্ছাচারীর মত আইনকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে আসামীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে ছাত্রদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। হতভাগ্য ছয় ছাত্র সেদিন পবিত্র শব-ই-বরাতের রাত্রে ৩২ জন আসাসির হাতে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। একই সঙ্গে তাদেরকে এবং তাদের হতভাগ্য পরিবারকে মিথ্যা ডাকাতির কলঙ্ক মাথায় নিয়ে সমাজে চলতে হয়েছে। তাই আসামিদের দৃষ্টান্তমুলক সাজা হওয়া উচিত বলে মনে করেন আদালত।
২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলার চরে বেড়াতে যান সাত ছাত্র। এই তরুণরা সবাই ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। স্থানীয় কিছু লোক তাদের ধরে ডাকাত সন্দেহে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। এতে করে আহত একজন ছাত্র আল-আমিন প্রানে বাঁচলেও ছয়জন মারা যান।