মদ্যপান বা মদ ঘরে রাখা বিষয়ে কী বলে দেশের আইন?

আটককৃত মদ
আটককৃত মদ  © ফাইল ছবি

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাদক বিষয়ে জিরো টলারেন্স নির্দেশের পর থেকে সম্প্রতি দেশে ব্যাপক হারে মাদক বিরোধী ধর পাকড় চলছে। আর অধিকাংশ অভিযুক্ত ও আটককৃতরাই হলেন সমাজের উচ্চবিত্ত এবং পরিচিত মুখ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে তাদের বাড়ি থেকে উদ্ধার হচ্ছে বিদেশী মদ সাথে বিভিন্ন নেশা জাতীয় দ্রব্য। তাই সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের মদ্যপান সম্পর্কীয় আইন এবং এই আইনের যথেষ্ট কড়াকড়ি বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে।

২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমোদন বা পারমিট ব্যাতীত কোনো ব্যক্তি মাদ্যপান করতে পারবেন না।  এই বিধিমালাতে মুসলিমদের জন্যে আগের মতোই মদ্যপান অবৈধ বলা হয়েছে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লিখিত ব্যবস্থাপত্র থাকলে কোন বিধিনিষেধ থাকবে না। চিকিৎসার প্রয়োজনে সিভিল সার্জন অথবা সরকারি মেডিকেল কলেজের কোন সহযোগী অধ্যাপকের লিখিত সার্টিফিকেট থাকলে কোন মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত নাগরিক মদ্যপান করতে পারবেন। এই শর্ত কেবল মুসলমানদের জন্যে প্রযোজ্য অন্য ধর্মাবলম্বীদের পারমিট থাকলেই নির্দিষ্ট পরিমাণ মদ্যপান করতে পারবেন। এছাড়া ২১ বছরের নিচে কোনো ব্যক্তির কাছে মদ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে।

তবে মুচি, মেথর, ডোম, চা শ্রমিক ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যগতভাবে প্রচলিত বা প্রস্তুতকৃত মদ্যপানকে আইনসিদ্ধ বলা হয়েছে এই আইনে। রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এবং পার্বত্য জেলাসমূহ এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যগত নিদর্শন হিসেবে এই স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বিধিমালা অনুযায়ী এই সম্প্রদায়ের মানুষজন পারমিট নিয়ে দেশি মদ কিনতে এবং পান করতে পারবেন। 

প্রচলিত আইনে, লাইসেন্স প্রাপ্ত বার কিংবা পানশালায় বসে বিদেশী কিংবা 'পারমিটধারী' দেশী নাগরিকগণ মদ্যপান করতে পারবেন আর বার থেকে বাসায় নিতে পারবেন মাত্র এক বোতল মদ। একজন মদ্যপায়ী ব্যক্তি প্রচলিত আইনে পারমিট এবং লাইসেন্স থাকার পরেও মাসে সাত লিটারের অধিক মদ্যপান করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। 

লাইসেন্স, পারমিট ও পাস বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, ফরমে, শর্তে এবং ফিস প্রদানের মাধ্যমে মহাপরিচালক অথবা তার কাছ থেকে এই উদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো অফিসার মদের অনুমোদন দিতে পারবেন। তবে এই ক্ষেত্রে পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করতে হবে বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা। লাইসেন্স, পারমিট অথবা পাসের মেয়াদ সেখানে উল্লিখিত শর্তে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অথবা তার প্রদানের তারিখ হতে সংশ্লিষ্ট অর্থ বছর শেষ হওয়া পর্যন্ত আইনসম্মত থাকবে বলে উল্লেখ আছে বিধিমালাতে। তবে এই ক্ষেত্রে শর্ত হিসেবে কোনো লাইসেন্স অথবা পারমিট এক মেয়াদে তিন বছর নবায়ন না করলে আবার নবায়ন করা যুক্তিযুক্ত হবে না।

কোনো ব্যক্তি কোনো লাইসেন্স, পারমিট অথবা পাসের শর্ত ভঙ্গ করলে লাইসেন্স পারমিট অথবা পাস প্রদানকারী অফিসার এই অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে পারবে। এই ক্ষেত্রে অফিসার অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে মুচলেকা গ্রহণের মাধ্যমে অনূর্ধ্ব এক লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করতে পারবেন এবং দ্বিতীয় মেয়াদে শর্ত না মানলে তা স্থায়ীভাবে বাতিল করতে পারবেন।

শুধু মদ পান নয়, মদ বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও রয়েছে সুনির্দিষ্ট আইন। মদ বিক্রয় করতে পারবে দুই থেকে পাঁচ বা তার চেয়ে বেশি তারকাযুক্ত হোটেল, পর্যটন বা কূটনৈতিক এলাকা, রেস্টুরেন্ট, ক্লাব ও ডিউটি ফ্রি শপ। এই প্রতিষ্ঠানগুলো যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এক থেকে সাতটি বা প্রয়োজন হলে যৌক্তিকতা দেখিয়ে তার বেশি বারের লাইসেন্স পেতে পারে। বারের মধ্যে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বার, ক্লাব বার রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এই বিধিমালায় বার বলতে বলা হয়েছে অনুমোদিত জায়গা বা স্থাপনা, যেখানে বিদেশি মদ বৈধভাবে বিক্রির জন্য সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও সেবন করা যাবে।

বিধিমালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর অধীনে যেসব ডিস্টিলারি বা ব্রিউয়ারির সনদ আছে, তারা বিয়ার উৎপাদন করতে পারবে, রপ্তানিও করতে পারবে। দেশে উৎপাদিত অ্যালকোহল বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে রপ্তানিকারককে শুল্ক মুক্ত রাখা হয়। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমতি ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে বাজারজাত করার অনুমতি নেই।

২০১৮ সালের এই বিধিমালাতে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে প্রতিটি দেশি ও বিদেশি মদ, বিয়ার বা এ–জাতীয় মাদকদ্রব্যের বোতল, মোড়ক বা পাত্রের গায়ে ‘মদ্যপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, আইনের বিধান ব্যতীত মদ্যপান দণ্ডনীয় অপরাধ’। 

 

 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence