মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা

মিয়ানমারের বিরুদ্ধ মামলা করেছে গাম্বিয়া। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস বা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে এ মামলা করা হয়েছে। গাম্বিয়ার বিচার মন্ত্রী আবুবকর তামবাদউ এটি নিশ্চিত করেছেন বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষর করে গাম্বিয়া ও মিয়ানমার। এটি শুধু দেশগুলোতে গণহত্যা থেকে বিরত থাকা নয় বরং এ ধরণের অপরাধ প্রতিরোধ এবং অপরাধের জন্য বিচার করতে বাধ্য করে।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ৪৬ পৃষ্ঠার মামলা আবেদনপত্র জমা দিয়েছে আফ্রিকার দেশটি। অভিযোগে বলা হয়েছে, মিয়ানমার গণহত্যা চালিয়ে একটি জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছে। এছাড়াও গণধর্ষণেরও অভিযোগ আনা হয়েছে ওই আবেদনপত্রে।

যদি আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এই আবেদন গ্রহণ করে তবে হেগে অবস্থিত আদালতটি প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের উপর সংঘটিত অপরাধের তদন্ত করবে। ফলে অন্য ট্রাইব্যুনালগুলোর উপর তাদের নির্ভর করতে হবে না। এর আগে এই আদালত সাবেক যুগোস্লাভিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল গঠন করেছিল।

সেখানে সার্বিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিচার করা হয়। আদালতের আইনুযায়ী সদস্য রাষ্ট্র আরেক সদস্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ আনার অধিকার রাখে। এই আবেদনে ১৯৪৮ সালের জেনেভা কনভেনশন ভাঙার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এদিকে ওআইসির সদস্য রাষ্ট্র গাম্বিয়ার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে অন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলো।

 

এর আগে মিয়ানামারের রোহিঙ্গা মুসলমান এবং অন্যান্য নৃ-তাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের উপর গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেশটির সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করেছে জাতিসংঘের একটি তদন্ত প্রতিবেদন।

জাতিসংঘের ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেশটির শীর্ষ ছয়জন সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত এবং বিচার হওয়া দরকার।

কয়েকশ' মানুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের উপর সহিংসতার বিষয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করে জাতিসংঘ, যা সোমবার প্রকাশ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে জাতিসংঘের দিক থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কঠোর ভাষায় নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে।

রাখাইন অঞ্চলে প্রকৃত নিরাপত্তা ঝুঁকির তুলনায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ অনেক বেশি অসম ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের শীর্ষ ছয়জন সামরিক কর্মকর্তার বিচার হওয়া প্রয়োজন। রোহিঙ্গাদের উপর সহিংসতা থামানোর জন্য হস্তক্ষেপ করতে ব্যর্থ হওয়ায় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি'র কড়া সমালোচনাও করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে।

এছাড়া, ঘটনা বিচারের জন্য বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর জন্য আহবান জানানো হয়েছে জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনে। মিয়ানমারের সরকার বরাবরই বলেছে যে রাখাইন অঞ্চলকে জঙ্গিদের ঝুঁকি মুক্ত করার জন্য সুনির্দিষ্ট অভিযান চালানো হয়েছে।

এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "সামরিক প্রয়োজনে নির্বিচারে হত্যা, গণ-ধর্ষণ, শিশুদের উপর হামলা এবং পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেবার বিষয়টি কখনো সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।"

মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ তদন্ত করার জন্য ২০১৭ সালের মার্চ মাসে জাতিসংঘ একটি নিরপেক্ষ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন গঠন করে।

ওই বছরের অগাস্ট মাসে রাখাইন অঞ্চলে সেনাবাহিনীর ব্যাপক অভিযানের আগেই এটি গঠন করা হয়। মিয়ানমারের ওই অভিযানের ফলে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

এ প্রতিবেদনে রাখাইন অঞ্চল ছাড়াও মিয়ানমারের কাচিন এবং শান অঞ্চলের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

ওইসব এলাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্রও উঠে এসেছে জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনে।

গত বছরের অগাস্ট মাসের ২৫ তারিখের পর থেকে সাত লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

জাতিসংঘের গঠিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন অবশ্য মিয়ানমারে ঢুকতে পারেনি।

কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ, স্যাটেলাইট ইমেজ, ছবি এবং ভিডিও'র উপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে মিয়ানমারের যে শীর্ষ ছয় সেনা কর্মকর্তাকে এসব ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান মিং অং হ্লাইং।


সর্বশেষ সংবাদ