বছরে ৩২৪ কোটি টাকা পাচার করেছেন ক্যাসিনো ‘গুরু’
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০১৯, ০৪:২০ PM , আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৯, ০৪:২০ PM
ক্যাসিনোর আয় থেকে এক বছরে প্রায় ৩২৪ কোটি টাকা পাচার করেছেন বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান। র্যাবের কাছে প্রাথমিক এ স্বীকারোক্তি দিয়েছেন খোদ ক্যাসিনো ‘গুরু’।
দেশ ছেড়ে পালানোর সময় সোমবার দুপুরে শাহজালাল বিমান্দরের থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩২২ নম্বর ফ্লাইটটি ছাড়ার আগমুহূর্তে সেলিম প্রধানকে বিমান থেকে আটক করা হয়। তিনি বাংলাদেশে অনলাইনে ক্যাসিনো ব্যবসায়ের মূলহোতা বলে জানায় র্যাব।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় রাজধানীর গুলশান-২ এর ১১/এ রোডে সেলিম প্রধানের অফিসে অভিযান চালায় র্যাব। রাতভর অভিযানের পর মঙ্গলবার দুপুরে বনানীর আরেকটি অফিসে অভিযান চালানো হয়।
২০ ঘণ্টা ধরে তার চলা অভিযানে নগদ ২৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ৭৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা সমমূল্যের ২৩ দেশের মুদ্রা, ৩২টি চেকবই, ১২টি পাসপোর্ট, ৪৮ বোতল মদ, তিনটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়।
এ সময় র্যাবের হেফাজতে ক্যাসিনো সেলিম জানান, এক বছরে তিনি ৩২৪ কোটি টাকা বিদেশ পাচার করেছেন। তিনটি ‘গেটওয়ে’র মাধ্যমে গত এক বছরে অনলাইন ক্যাসিনো গুরু এই অর্থ পাচার করেন তিনি। সেলিম বলেছেন, একটি গেটওয়ে দিয়ে মাসে পাচার করতেন প্রায় ৯ কোটি টাকা।
এই গেটওয়ে-সংক্রান্ত কাগজপত্রও র্যাবের হাতে এসেছে। বাকি দুটির বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। এই তিনটি গেটওয়ের বাইরে সেলিম লন্ডনেও টাকা পাচার করছেন। গ্রেফতারের পর র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে তিনি এ স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
তারেক রহমানের সহযোগী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সঙ্গে সেলিমের ঘনিষ্ঠতা আছে। ২০০১-০৬ সালের মধ্যে তিনি মামুনকে একটি বিএমডব্লিউ গাড়িও উপহার দেন। সোমবার গ্রেফতারের পর র্যাব তাকে অনেকটা সময় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
এদিকে র্যাব সোম ও মঙ্গলবার ২০ ঘণ্টা ধরে তার দুটি অফিসে অভিযান চালিয়ে নগদ ২৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ৭৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা সমমূল্যের ২৩ দেশের মুদ্রা, ৩২টি চেকবই, ১২টি পাসপোর্ট, ৪৮ বোতল মদ, তিনটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করেছে।
সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও বৈদেশিক মুদ্রা আইনে তিনটি মামলা হয়েছে। এছাড়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, উত্তর কোরিয়ার নাগরিক মি. দু’র পরামর্শে বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনোর ব্যবসা শুরু করে সেলিম প্রধান। সব ধরনের কারিগরি সহায়তাও দেয় মি. দু। ব্যবসার অর্ধেক অংশীদারও উত্তর কোরিয়ার এই নাগরিক। এই ব্যবসা থেকে আয়ের অধিকাংশ অর্থই বিদেশে পাচার হয়েছে।
একটি ‘গেটওয়ে’ থেকেই মাসে পাচার হতো প্রায় ৯ কোটি টাকা। এরকম তিনটি ‘গেটওয়ে’র বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। তিনটি গেটওয়ে দিয়ে এক বছর ধরে ক্যাসিনোর টাকা পাচার করছে।আরও গেটওয়ে আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। র্যাবের অপর এক সূত্র জানায়, তিন গেটওয়ে দিয়ে সেলিম মাসে ২৭ কোটি এবং বছরে ৩২৪ কোটি টাকা পাচার করেছে।
তার অফিস থেকে পাওয়া বিভিন্ন কাগজ-পত্রও পরীক্ষা করে দেখা যায়, এই ব্যবসাটি সেলিম কোরীয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালনা করছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রধান। এই ব্যবসার ৫০ শতাংশের মালিকানা তার এবং বাকি ৫০ শতাংশের অংশীদার উত্তর কোরিয়ার নাগরিক মি. দু।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম জানান, তারেক রহমানের সহযোগী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল সেলিম প্রধানের। ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরে সেলিম প্রধান মামুনকে বিএমডব্লিউ গাড়ি উপহার দেন। সেলিম লন্ডনে টাকা পাঠাতেন বলেও তথ্য পেয়েছে র্যাব। সেখানে কার কাছে টাকা পাঠাতেন, সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।