সম্রাটের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

  © সংগৃহীত

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। গত রোববার এ–সংক্রান্ত একটি আদেশ দেশের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছে, সম্রাট এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে আছেন।

এ ছাড়া সম্রাট ও সরকারদলীয় একজন সাংসদের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীম এবং কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলমের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত (অবরুদ্ধ) করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আলোচিত যুবলীগ নেতা সম্রাট ছয় দিন ধরে কাকরাইলের ভূঁইয়া ম্যানশনে তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে শতাধিক যুবকের পাহারায় অবস্থান করছেন। সেখানে সবার খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা আছে। যুবলীগের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলেছে, দলের শীর্ষ নেতাদের পরামর্শে সম্রাট বাসায় না থেকে ব্যক্তিগত কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। তবে সম্রাট নিজের অবস্থান সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সম্রাটের ব্যাপারে এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘যার নাম আপনারা বলছেন, সে ছাড়াও সরকারের অন্য কেউ যদি কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়ায়, তাহলে তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, শীর্ষ মহলের সবুজ সংকেতের পরই সম্রাটের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

ক্যাসিনো বন্ধে গত বুধবার অভিযান শুরু করে র‍্যাব। ওই দিন মতিঝিলের ইয়ংমেনস, ওয়ান্ডারার্স, মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্র ও বনানীর গোল্ডেন ঢাকা ক্লাবে অভিযান চালিয়ে সেগুলো সিলগালা করে দেওয়া হয়। এ অভিযানের ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্লাব ও জুয়ার আসরে অভিযান চালায় পুলিশ। ঢাকার বাইরে বরিশালের নাজিরপুরে নবজাগরণ নামের একটি ক্লাবেও গতকাল অভিযান চালানো হয়।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় মোহামেডান, আরামবাগ, দিলকুশা, ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়া ও ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে ক্যাসিনো ছিল। এর মধ্যে ইয়ংমেনস ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। বাকি পাঁচটি ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন সম্রাটের লোকজন। সম্রাট নিজে ক্যাসিনো দেখাশোনা না করলেও তাঁর ক্যাসিনো চালাতেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক ওরফে সাঈদ। তাঁরা এক বছর আগে পল্টনের প্রীতম–জামান টাওয়ারে ক্যাসিনো চালু করেছিলেন। কাওসার ও মমিনুল হক এখন বিদেশে।

ক্লাবপাড়ার একাধিক সূত্র বলেছে, ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাব প্রভাব খাটিয়ে দখল করে সেখানে ক্যাসিনো চালু করেন খালেদ মাহমুদ। আরামবাগ ও দিলকুশা ক্লাবের সভাপতি আওয়ামী লীগের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক মমিনুল হক। তিনি অন্তত পাঁচটি ক্লাবের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। তিনি সম্রাটের ঘনিষ্ঠ লোক বলে পরিচিত। তাঁর হয়ে আরামবাগ ক্লাবে ক্যাসিনো দেখভাল করতেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী শাহাজাদুল ইসলাম।

ক্যাসিনোর কারণে বন্ধ হওয়া আরেক ক্লাব ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের সভাপতি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কায়সার। এই ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন রশিদুল হক নামের এক ব্যবসায়ী।

ভিক্টোরিয়া ও মোহামেডান ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন আবুল কাশেম নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি শান্তিনগরে বসবাস করেন। মমিনুল হক মোহামেডান ক্লাবকে চাপ দিয়ে ক্যাসিনো চালু করেছিলেন। বিনিময়ে প্রতি মাসে ক্লাবকে মাত্র ২০ লাখ টাকা করে দেওয়া হতো।

মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক সারওয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সবকিছুই সম্রাটের কথামতো হয়েছিল।

 


সর্বশেষ সংবাদ