এবার লাশবাহী গাড়ি আটকে পুলিশের চাঁদা দাবি!
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৫ জুন ২০১৯, ০৬:৪৭ PM , আপডেট: ১৫ জুন ২০১৯, ০৭:০১ PM
পুলিশের ঘুষ নেয়ার বিষয়টি কম বেশি সবারই জানা। কিন্তু অবস্থা এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে মৃত ব্যক্তির লাশ নিয়ে যাওয়া গাড়িও বাদ যাচ্ছেনা ঘুষের হাত থেকে। এমন অমানবিক ঘটনার খবর পাওয়া গেছে সিলেটের মৌলভীবাজার থেকে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা।
জানা গেছে, শনিবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মৃত ব্যক্তির লাশ বহন করা একটি গাড়ি আটকে চাঁদা দাবি ও চালককে মারধর করে পুলিশ।এ ঘটনায় শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে এলাকাবাসীকে নিয়ে ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বেলা ১১টা থেকে দুপুর পৌনে ২টা পর্যন্ত অবরোধ চলাকালে মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। পরে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি ও শ্রমিক নেতারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, উপজেলার মতিগঞ্জ এলাকার রুবেল নামে এক চালক শুক্রবার রাতে সিলেটের ওসমানী নগরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিহত রুবেলের লাশ একটি পিকআপ ভ্যানে (ঢাকা মেট্রো-ন-১৫৭৩৮১) শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে রওনা হয়। পথে মতিগঞ্জের বটেরতল এলাকায় অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার অপরাধে সাতগাঁও হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নান্নু মণ্ডল পিকআপটি আটক করেন। পরে চালক ও লাশের স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও মারধর করে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ করেন পিকআপ চালক।
লাশ বহন করা পিকআপ চালক শাকিবুল হাসান শাকিল বলেন, উপজেলার মতিগঞ্জের বটেরতল এলাকায় লাশ নিয়ে পৌঁছালে সাতগাঁও হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই নান্নু মণ্ডল প্রথমে জিজ্ঞাসা করেন- এটা কিসের লাশ, চুরির না মার্ডারের? পরে গাড়ির কাগজপত্র চেক করার পর ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেয়ায় একপর্যায়ে আমাকে মারধর করে।
অভিযোগ অস্বীকার করে সাতগাঁও হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই নান্নু মণ্ডল বলেন, ‘পুলিশ এত অমানুষ নয় যে লাশের গাড়ি আটকিয়ে টাকা চাইবে। লাশের গাড়ির সঙ্গে আমার দেখাই হয়নি।’
তিনি বলেন, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উত্তর উত্তরসুর বিসিক শিল্পনগরীর সামনে একটি পিকআপ ভ্যান (নম্বর ৪৮৬৭) মাত্রাতিরিক্ত মাল বোঝাই করে পিকআপের ওপরে তিনজন যাত্রী বসিয়ে শ্রীমঙ্গল থেকে ভুনবীর বাজারে যাওয়ার পথে আটক করি। পরে পিকআপের ওপরে বোঝাই তিন যাত্রীকে নামিয়ে সতর্ক করে ছেড়ে দেই। লোকাল গাড়ি দেখে ছেড়ে দেয়াটাই বড় ভুল হয়েছে। এখন অন্য বদনাম দিচ্ছে।
অবরোধের খবর জানার পর শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আব্দুস ছালেক ট্রাক-ট্যাংকলরি পরিবহন শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বৈঠকে এসআই নান্নু মণ্ডলকে ফাঁড়ি থেকে বদলির আশ্বাস পেয়ে সাধারণ শ্রমিকরা পৌনে ২টার দিকে সড়ক অবরোধ তুলে নেন।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আব্দুস ছালেক বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর রিজিয়নের এসপি ও মৌলভীবাজারের এসপি স্যারকে বিষয়টি অবহিত করেছি। তদন্তপূর্বক পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
ট্রাক, ট্যাংকলরি, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রীমঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ফাঁড়ি ইনচার্জ নান্নু মণ্ডল দীর্ঘদিন ধরে মহাসড়কে যানবাহন আটকে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। এতে করে সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল।
তিনি জানান, আজ লাশবাহী যান আটকে ৫ হাজার টাকা দাবি করে না পেয়ে আমাদের এক চালককে মারধর করেন। আমরা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছি। আমরা এই মুহূর্তে নান্নু মণ্ডলের স্ট্যান্ড রিলিজ চাচ্ছি। প্রশাসন থেকে আমাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছে এবং আমরা অবরোধ তুলে নিয়েছি।দাবি পূরণ না হলে আবারও কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও হুশিয়ারি দেন এই শ্রমিক নেতা।