কড়াইল বস্তি ৪ ঘণ্টা ধরে পুড়ছে, গোটা বস্তি ‘ছাই’ হওয়ার শঙ্কা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৮ PM , আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৮ PM
ঢাকার মহাখালী কড়াইল বস্তিতে লাগা ভয়াবহ আগুন প্রায় ৪ ঘণ্টা পরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস প্রথমে ৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠায়। পরে ধাপে ধাপে সংখ্যা বাড়িয়ে রাত ৯টার মধ্যে মোট ১৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। এ আগুনে প্রায় ৬ হাজার ঘরের অর্ধেকই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বাকি ৩ হাজার ঘরও স্পর্শ করেছে আগুনের লেলিহান শিখা।
বস্তিবাসীদের দাবি, কেউ নাশকতার মাধ্যমে আগুন লাগিয়েছে। আগুনে গোটা বস্তিই ছাই হওয়ার শঙ্কা করছেন তারা।
জানা গেছে, আগুনে দৌড়াদৌড়ি করে জিনিসপত্র বের করতে গিয়ে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এক নারী ও শিশুর নিখোঁজের অভিযোগ পাওয়া গেছে, যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
ফায়ার সার্ভিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। তবে আগুনের উৎস এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বস্তিতে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, লেপ–তোশক, কাঠ ও গ্যাস সিলিন্ডার থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলে জানান তিনি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম দোলন জানান, খবর পাওয়ার পর ১৬টি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে রওনা হয়। তবে আগুনের উৎস ও হতাহতের সংখ্যা এখনও নিশ্চিত নয়।
আরও পড়ুন: ‘সব গেছে গা বাবা, পড়নের এই কাপড় ছাড়া কিচ্ছু নাই’
সরেজমিনে দেখা গেছে, বউবাজার রোড থেকে বেলতলা রোড পর্যন্ত যানজট তৈরি হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের পানিবাহী গাড়িগুলো আগুনের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। দূর থেকে পাইপ টেনে পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর অনেক জায়গায় বস্তির দেয়াল ভেঙে পথ তৈরি করতে হয়।
বস্তির সবজি বিক্রেতা সেলিম অভিযোগ করে বলেন, ‘আগুন লাগার অর্ধঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস এসেছে। কিন্তু যানজটে আটকে থাকার কারণে সব গাড়ি আগুনের কাছে যেতে পারেনি।’
পোশাকশ্রমিক জহুরা বলেন, ‘মনে হলো কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। এত দ্রুত ছড়িয়েছে যে দৌড়েও পালানো গেল না। কোনো রকমে জীবন নিয়ে বের হয়েছি।’
সব হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বস্তিবাসী লাভলী বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার সব পুড়ে ছাই। সাত বছর ধরে কিস্তিতে কিস্তিতে জিনিসপত্র কিনেছি। টিভি, ফ্রিজ কিছুই রইল না।’
গার্মেন্টস কর্মী নাসিমা বেগম বলেন, ‘বোনের ফোনে শুনে ছুটে এসেছি। আমার ঘরটাও নাকি পুড়ে গেছে। এখন কীভাবে নতুন করে শুরু করব, বুঝতে পারছি না।’
এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে বস্তিটিতে আগুন লেগেছিল। সেই দফায় ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সে সময় পুড়েছিল ৬১টি ঘর। তার দুই মাস আগে ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বরও বস্তিটিতে আগুন লেগেছিল।