সাত মাসেও হাসেনি ফুটো হৃদয় নিয়ে জন্মানো সাজ্জাদ, ওর কান্নাই যেন বলছে—‘আমি বাঁচতে চাই’
- ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৩:১২ PM , আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৭:১৬ PM

সাত মাসের সাজ্জাদ এখনও হাসতে শেখেনি। জন্ম থেকেই মুখে কান্না আর চোখে অশ্রু। বুকের ভিতরে ক্রমেই বেড়ে চলেছে জীবন-মৃত্যুর লড়াই। তবু মায়ের কোলে মাথা রেখে নিশ্চুপভাবে তাকিয়ে থাকে চারপাশে চোখ যেন প্রশ্ন করে, ‘এই পৃথিবীতে বাঁচার একটু সুযোগ কি আমার নেই?’
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার লাইনপাড়ার হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া সাজ্জাদ হোসেনের হৃদয়ে ফুটো ধরা পড়েছে। খেতে পারে না, ঘুমাতে পারে না, একটানা কেবল কান্না করে। অথচ এই শিশুই ছিল জেলহক-শাপলা দম্পতির আশার আলো, বহু প্রতীক্ষিত একটি পুত্র সন্তান।
পরপর দুই কন্যা সন্তানের পর ছোট সাজ্জাদের আগমনে পরিবারে এসেছিল একরাশ আনন্দ। কিন্তু সেই আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। জন্মের পর থেকেই সাজ্জাদের কান্না আর অস্বাভাবিক আচরণ তাদের চিন্তায় ফেলে দেয়। স্থানীয় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে প্রথমবারের মতো তারা জানতে পারেন, ছোট্ট এই শিশুর হৃদয়ে ফুটো রয়েছে।
পরবর্তীতে ধারদেনা করে সন্তানকে নিয়ে ছুটে যান ঢাকায়, বড় হাসপাতালে। সেখানকার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা যায়, সাজ্জাদের হার্টের ফুটোটি বড়, এতে করে যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে তার ছোট্ট জীবনের আলো। চিকিৎসকরা বলেন, ‘ওপেন হার্ট সার্জারির মাধ্যমে অপারেশন করাতে হবে। খরচ প্রায় ৩ লক্ষ টাকা।’
কিন্তু ৩ লক্ষ টাকা যেন অগম্য এক স্বপ্নের মতো। রেললাইনের পাশেই কোনোমতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে থাকা এই পরিবার দৈনিক খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খায়। জেলহক অন্যের বাড়িতে কাজ করেন, স্ত্রী শাপলাও গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন। দু’জনের মিলে যতটুকু আয়, তা দিয়ে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেওয়াই এক যুদ্ধ।
এ অবস্থায় ছেলেকে বাঁচাতে সমাজের কাছে হাত পাততেই হয় জেলহকের। কাঁপা গলায় বলেন, ‘আমার ছেলেটা হাসতেও শেখেনি। তার চোখে প্রাণ আছে, সে বাঁচতে চায়। শুধু টাকার অভাবে যদি তাকে হারাতে হয়, সেটা কোন মা-বাবা সইতে পারে?’
সাজ্জাদের মা শাপলা বলেন, ‘প্রতিদিন চোখের সামনে ওর কষ্ট দেখে বুকটা ফেটে যায়। ছেলের জন্য কিছু করতে না পারার কষ্টটা সবচেয়ে বেশি। মানুষ যদি পাশে দাঁড়ায়, তাহলে হয়তো আমার সন্তানটাকে বাঁচাতে পারবো।’
সাজ্জাদের জীবন বাঁচাতে প্রয়োজন ৩ লক্ষ টাকা। হয়তো এই অর্থ অনেকের জন্য বড় নয়, কিন্তু জেলহক-শাপলার জন্য তা এক আকাশের সমান। সমাজের সামর্থ্যবানদের কাছে বিনীত অনুরোধ, একটু সহানুভূতি, একটু সহায়তা হয়ত ছোট সাজ্জাদকে ফিরিয়ে দিতে পারে একটি স্বাভাবিক জীবন।
যোগাযোগের ঠিকানা- জেলহক (শিশুর পিতা), ভাঙ্গুড়া লাইনপাড়া (ভদ্রপাড়া), ভাঙ্গুড়া পৌরসভা, ভাঙ্গুড়া, পাবনা। মোবাইল- ০১৭৪৪৫০৫৩৯৫।