উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন ও বিদ্যুৎ বিল আদায় প্রধান শিক্ষকের

ইসলামগঞ্জ জনতা উচ্চ বিদ্যালয়
ইসলামগঞ্জ জনতা উচ্চ বিদ্যালয়  © টিডিসি

শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অমান্য করে নোয়াখালী সদর উপজেলার ইসলামগঞ্জ জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ে উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক বেতন ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তবে দাবি করা অর্থ না দিলে শিক্ষার্থীদের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। অথচ উপবৃত্তি পাওয়া দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বেতন মওকুফ করার পরিপত্র জারি করা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে অভিযোগ করে বলেন, চলতি বছরে বিদ্যালয়ের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী উপবৃত্তি প্রাপ্ত ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৭ মাসের বিদ্যুৎ বিল ও আইসিটি বিল বাবত জনপ্রতি ৪২০ টাকা, ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিকট জনপ্রতি ৪৯০ টাকা, ৮ম শ্রেণির কাছ শিক্ষার্থীদের থেকে ৫৬০ টাকা ও ৯ম-১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৭০০ টাকা হারে কেটে নেওয়া হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ ধার্যকৃত বেতন দিতে না পারলে প্রবেশ পত্র কিংবা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ মিলছে না। 

এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, ২০২৫ সালে পূর্ববর্তী শ্রেণি থেকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নিকট সেশন ফি বাবত ১২০০ টাকা বোর্ড কর্তৃক নির্ধারণ করা থাকলেও কারো কারোর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ১৫০০-১৭০০ টাকা।

তবে এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে গতকাল (২ জুলাই) দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিবেদক সরেজমিনে ইসলামগঞ্জ জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ে গেলে ঘটনার সত্যতা মেলে। 

বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির এক অভিভাবক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমার মেয়ের পূর্বের কোনো বকেয়া না থাকা সত্ত্বেও ৭ম থেকে ৮ম শ্রেণিতে সেশন ফি বাবত ১২০০ টাকার জায়গায় ১৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। কারো কারো কাছ থেকে ১৬-১৭’শ টাকা নেওয়া হয়েছে। এখন আবার উপবৃত্তি প্রাপ্তদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিল,আইসিটি ও শিক্ষকদের বেতন দেওয়াসহ বিভিন্ন অজুহাতে টাকা নিচ্ছেন।’

বিদ্যালয়ের আরেকজন অভিভাবক জানিয়েছেন, ‘আমরা দিনমজুর মানুষ। কোনোমতে ডাল-ভাত কয়টা খাই। এতো টাকা- পয়সা কোথায় পাই? স্কুলে টাকা পয়সা একটু কম দিলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয় না। এভাবে যার থেকে যেমন ইচ্ছে সেভাবে নিচ্ছেন শিক্ষকরা। উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বেতন নেওয়া অর্থ ফেরত চাই।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামগঞ্জ জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বদেশ চন্দ্র দাস ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘পর্যাপ্ত শিক্ষক সংকটের কারণে আমাদের অতিরিক্ত ৪ জন অতিথি শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করানো হচ্ছে। এবছর বিদ্যালয়ের ৫০০ ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির আওতাভুক্ত হয়েছে। শিক্ষকদের বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচাপাতির জন্য আমরা উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক রেজুলেশন করে উক্ত টাকা গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে সেশন ফি অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে কেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করে বলেন বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী ১২০০ টাকা করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। পূর্ববর্তী ক্লাসে যাদের বকেয়া ছিল তাদের থেকে বাড়তি নেওয়া যেতে পারে।’

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবিএম আজাদ উদ্দিন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস কে বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নিকট কিছু অংশ বেতন নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ বিদ্যালয়ের ইলেকট্রিসিটি বিল আছে, গেস্ট টিচারদের বেতন আছে। সেটা সমন্বয় করতে পারছি না বিধায় নিচ্ছি। তবে যদি বোর্ডের নিয়মের বাহিরে হয় তাহলে আর নেব না।’


সর্বশেষ সংবাদ