এইচআরএসএসের প্রতিবেদন

এপ্রিলে ৭৮ রাজনৈতিক সহিংসতায় ১১ জন নিহত—৮ জনই বিএনপির

এইচআরএসএস
এইচআরএসএস  © লোগো

গত এপ্রিল মাসে দেশে কমপক্ষে ৭৮টি ‘রাজনৈতিক সহিংসতার’ ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১১ জন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৭২৭ জন। নিহতদের মধ্যে বিএনপির ৮ জন আর বাকি ৩ জন আওয়ামী লীগের। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধ পরায়ণতা, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখল নিয়েই অধিকাংশ সহিংসতার এসব ঘটনা ঘটেছে।

আজ মঙ্গলবার (৬ মে) বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)’-এর পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক মাসিক (এপ্রিল) মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এপ্রিল মাসে সহিংসতার ৭৮টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ৩৯টি ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪৬৭ জন ও নিহত ৭ জন, ২৫টি বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ২০২ জন ও নিহত ৩ জন, ২টি বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৩ জন, ৩টি বিএনপি-এনসিপির মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৬ জন, ৩টি আওয়ামী লীগ-জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৪ জন, এনসিপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষের ৪টি ঘটনায় আহত হয়েছেন ৫ জন, আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দলে ৩টি ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪০ জন ও নিহত ১ জন, এবং ৩টি ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন দলের মধ্যে। ৭৮টি সহিংসতার ঘটনার ৬৯টিই ঘটেছে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ও বিএনপির সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে।

এতে আরও বলা হয়, গত মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসে বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জামায়াত ও এনসিপির সাথে সংঘর্ষ কমেছে। এর পাশাপাশি দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অন্তত ২২টি ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় আওয়ামী লীগের ৫ জন, বিএনপির ৯ জন, ও জামায়াতের ১ জনসহ অন্তত ১৬ জন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এছাড়াও এ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ, শতাধিক বাড়ি-ঘর, যানবাহন, ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সেইসাথে বিএনপির নিজেদের কর্মীদের ও প্রতিপক্ষের দ্বারা অন্তত ৪ টি রাজনৈতিক কার্যালয় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

সাংবাদিক নির্যাতন, গণপিটুনি ও সীমান্ত হত্যার তথ্য জানিয়ে এতে বলা হয়, এপ্রিল মাসে অন্তত ২৯টি ঘটনায় কমপক্ষে ৩৮ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ সকল ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ১৫ জন, লাঞ্চনার শিকার হয়েছেন ৭ জন, হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন ৫ জন ও গ্রেফতার হয়েছেন ৩ জন। এছাড়াও ২টি মামলায় ৮ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এর অধীনে দায়ের করা ৩টি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ২ জন এবং অভিযুক্ত করা হয়েছে ৫ জনকে। এ মাসে গণপিটুনির ২২টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১২ জন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ২১ জন। এদিকে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ১০টি হামলার ঘটনায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক ৫ জন বাংলাদেশী নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছেন এবং গ্রেফতার করা হয়েছে ৩ জনকে। নিহত ৫ জনের মধ্যে ২ জনকে পিটিয়ে এবং ৩ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: শত কোটি টাকার দুই আন্তর্জাতিক প্রকল্পে নেতৃত্ব দেবে ঢাবি

নারী-শিশু ও শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনার তথ্য জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এপ্রিলে কমপক্ষে ১৯৬ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮৮ জন, যাদের মধ্যে ৫২ (৫৯%) জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে, ১৯ জন নারী ও কন্যা শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৬ জনকে। এ মাসে ২৪টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১১৪ জন শ্রমিক। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং শ্রমিকদের সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের অভাবে দুর্ঘটনায় ১১ জন শ্রমিক তাদের কর্মক্ষেত্রে মারা গেছেন। এছাড়া একজন গৃহকর্মী মালিকের নির্যাতনে গুরুতর আহত হয়েছেন।

মানবাধিকারের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সুপারিশ জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, ও নাগরিকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়ন করা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আর এ সকল বিষয় বাস্তবায়ন করতে না পারলে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে।

‘‘তাই এইচআরএসএসর পক্ষ থেকে সরকারকে মানবাধিকার রক্ষায় ও সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে এবং দেশের সকল সচেতন নাগরিক, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে আরো সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।’’


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!