মাদ্রাসার অ্যাডহক কমিটি নিয়ে আদালতে মামলা, ডিসিকে শোকজ
- ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৭ PM , আপডেট: ২৩ জুন ২০২৫, ০৪:৩৭ PM
ময়মনসিংহ সদরের কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদ্রাসার অ্যাডহক কমিটি নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ নিয়ে দায়ের করা মামলার পর আদালত কমিটির কার্যক্রমে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। একইসঙ্গে কমিটির সভাপতি ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমকে শোকজ করা হয়েছে।
অভিযোগ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, কাদির বক্স সরকার ১৮৯০ সালে কাদেরিয়া কামিল মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। তার নামেই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তিনি মাদ্রাসাটির একমাত্র প্রতিষ্ঠাতা। তার প্রথম প্রজন্মের সবাই ও দ্বিতীয় প্রজন্মের দুজন ছাড়া বাকিরা মৃত্যুবরণ করেছেন। তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের অনেক ব্যক্তিই জীবিত। আতাউর রহমান নামের এক ব্যক্তি কাদির বক্স সরকারের প্রপৌত্র। আতাউর রহমান মাদ্রাসাটির একমাত্র দাতা এবং আজীবন দাতা। আতাউর রহমান ২০০৪ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত অনুমোদিত সব গভর্নিং বডির দাতা সদস্য ছিলেন। ২০০৪ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত মাদ্রাসাটির অনুমোদিত সকল গভর্নিং বডিতে মৃত্যুজনিত কারণে প্রতিষ্ঠাতা সদস্যপদ শূন্য ছিল।
২০২৩ সালের আগে কামিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের মৃত্যুতে তার উত্তরাধিকারদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়ার বিধান ছিল না। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডি সংক্রান্ত সংবিধি-২০২৩ এর ২৬ নম্বর ধারায় সর্বপ্রথম কোন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের মৃত্যু হলে তার উত্তরাধিকারদের মধ্য থেকে তাদের মনোনীত ব্যক্তি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে গণ্য হওয়ার বিধান করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন নিজের দুর্নীতি আড়াল করতে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধি-২০২৩ এর সুস্পষ্ট ২৬ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করে শেরপুর জেলা শহরের শিববাড়ী এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা খন্দকার মাহবুবুল আলম নামের একজনের নাম লিখে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব জমা দেন। আতাউর রহমান অধ্যক্ষের এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে বিধি অনুযায়ী এডহক কমিটিতে দাতাকে সদস্য মনোনয়ন দেওয়ার জন্য কয়েকবার আবেদন করেন।
এই বিষয়ে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আবেদন করা হলেও জেলা প্রশাসক সংবিধি-২০২৩ এর ২৬ নম্বর ধারা অমান্য করে খন্দকার মাহবুবুল আলমকে এডহক কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মনোনীত করেছেন। এই বিষয়গুলো বারবার অবগত করা হয়েছে এবং চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি নিয়ম অনুযায়ী কমপ্লেইন ফি বাবদ ৩ হাজার টাকা ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় সংবিধি অনুসরণ না করে সূত্রস্থ স্মারকে খন্দকার মাহবুবুল আলমকে এডহক কমিটিতে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য করে ৫ সদস্যের এডহক কমিটি গঠন করে। অথচ খন্দকার মাহবুবুল আলম মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠাতা হওয়ার জন্য কখনো কোনো টাকা দান করেননি। তার নাম কখনো মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা তালিকায় ছিল না এবং সে প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের উত্তরাধিকারীও না।
হাইকোর্টে মামলার বাদী ও নিজেকে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আজীবন দাতা সদস্য দাবি করে আতাউর রহমান বলেন, বিভিন্ন সময় অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন ছুটি না নিয়েই প্রতিষ্ঠান থেকে যেকোনো স্থানে চলে যান। তিনি একজন দুর্নীতিবাজ লোক। এ নিয়ে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসেবে ৩ হাজার টাকা কমপ্লেইন ফি জমা দিয়ে একটি আবেদন করা হলেও ফলাফল শূন্য।
তিনি আরও বলেন, অবৈধ পন্থায় খন্দকার মাহবুবুল আলম নামের একজনকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য করা হয়েছে। এ নিয়ে আদালতে মামলা করেছিলাম। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল নিশি জারি করেছেন। এছাড়া এ কে এম সাইদুর রহমান নামের আরেকজন ময়মনসিংহের আদালতে মামলা করেছিলেন। ময়মনসিংহের সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক গত ২৩ এপ্রিল কমিটির কার্যক্রমে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞাসহ জেলা প্রশাসককে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছেন।
এডহক কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য খন্দকার মাহবুবুল আলম বলেন, বৈধ পন্থায় আমাকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য করা হয়েছে। তবুও আদালতে মামলা করা হয়েছে। আদালত কমিটির কার্যক্রমে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কিনা আমার জানা নেই। এছাড়া আমি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে অংশগ্রহণও করি না। কারণ, আমি শেরপুর থাকি।
তবে কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন বলেন, অনৈতিক পন্থায় খন্দকার মাহবুবুল আলমকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য করা হয়নি। আমি কোনো অনিয়ম কিংবা দুর্নীতির সঙ্গেও জড়িত না। ছুটি না নিয়ে প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টিও সত্য নয়।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক। আদালত শুধু উনাকেই শোকজ করেছে। কমিটির কার্যক্রম বন্ধের জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।
সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, অ্যাডহক কমিটিতে খন্দকার মাহবুবুল আলম নামের একজনকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য করায় আদালতে মামলা হওয়ার বিষয়টি অনেক আগেই জানতে পেরেছি। কমিটির কার্যক্রম নিয়ে আদালত অস্থায়ী নিয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তবে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতি আছে কিনা খোঁজ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, আদালতে মামলা করায় আমাকে শোকজ করা হয়েছিল। আমি ইতোমধ্যে এর জবাব দিয়েছি।