বনশ্রীর ছিনতাই নিয়ে যা বললেন সেই স্বর্ণ ব্যবসায়ী

আনোয়ার হোসেন
আনোয়ার হোসেন  © সংগৃহীত

‘এক সপ্তাহ আগেও ডিবি পরিচয় দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছিল এবং বলেছিল, অবৈধ স্বর্ণের ব্যবসা আমার। আমার নামে নাকি মামলাও আছে। এ রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা নেয়। আরও ১০ হাজার টাকা চেয়েছিল। সামনাসামনি টাকা দিতে চাইলে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, তারাই এসব ঘটনা ঘটিয়েছে।’

কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর বনশ্রীতে ছিনতাইকারীর গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত আনোয়ার হোসেন (৪৩)। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি সার্জারি বিভাগের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন তিনি।

আজ সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা পৌনে ৩টার দিকে সেখানেই তাঁর সঙ্গে কথা হয়। পরে বেলা সোয়া ৩টার দিকে তাঁকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি পোস্ট-অপারেটিভ ওয়ার্ডে আছেন।

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রবিবার রাতে বনশ্রী সি ব্লক, ৫ নম্বর অ্যাভিনিউ মেইন রোডে ‘‘অলংকার জুয়েলারি’’ নামে আমার দোকানটি বন্ধ করে প্রায় ১৪০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা ব্যাগে ভরে বাসার দিকে রওনা হয়েছিলাম। আমার বাসা বনশ্রী ডি ব্লকের ৭ নম্বর রোডে। দোকান থেকে বাসায় যেতে ১ মিনিট সময় লাগে।’

ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘নিজের মোটরসাইকেল চালিয়ে বাসার সামনে গিয়ে গেটে ধাক্কাধাক্কি করে দারোয়ানকে ডাকতে থাকি। ওই মুহূর্তে পাশের গলি থেকে তিনটি মোটরসাইকেলে দুর্বৃত্তরা এসে আমাকে ঘেরাও করে। তখনো আমি কিছু বুঝতে পারিনি। যখন আমার ব্যাগ ধরে টানাটানি করে, তখন আমি বাইক ফেলে দৌড় দিই। তখন ওরা বাইক নিয়ে আবার আমার কাছে এসে ঘিরে ফেলে। ব্যাগ ছাড়তে না চাইলে তারা একের পর এক গুলি করতে থাকে।’

৭ দিন ধরে বিভিন্ন নম্বর থেকে ডিবি পরিচয়ে তাঁকে ফোন দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হতো জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও ডিবি পরিচয় দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছিল এবং বলেছিল, অবৈধ স্বর্ণের ব্যবসা আমার। আমার নামে নাকি মামলাও আছে। এ রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা নেয়। আরও ১০ হাজার টাকা চেয়েছিল। সামনাসামনি টাকা দিতে চাইলে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, তারাই এসব ঘটনা ঘটিয়েছে।’

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘাতকেরা নিশ্চয়ই আগে থেকে আমাকে ফলো করছিল। গলিতে ওত পেতে ছিল। তবে তারা সবাই হেলমেট পরা ছিল। কাউকে চিনতে পারিনি। আমি দারোয়ানকে গেট খুলতে অনেক ডাকাডাকি করছিলাম। তবে সেখানে দারোয়ান গেট খোলেনি।’

এ ঘটনার পেছনে দারোয়ানের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যদি সময়মতো গেট খুলে দিত, আমার এই পরিণতি হতো না। এ ছাড়া আমি কখন বাসায় আসি, বের হই—এসব ইনফরমেশনও ওই দারোয়ান তাদেরকে দিয়ে থাকতে পারে। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন সমিতি থেকে ৭০-৮০ লাখ টাকা ঋণ করেছি। এ বছর মেয়েটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাব। এখন তো আমার কিছুই নেই। একেবারে নিঃস্ব আমি।’

আহত আনোয়ার হোসেনের বড় ভাই মো. আমির হোসেন বলেন, আনোয়ারের দুই মেয়ে ও এক ছেলে আছে। সন্তান, স্ত্রীসহ বনশ্রীতে ভাড়া বাসায় থাকেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের পূর্ব কুতুবপুর গ্রামে। ১৫-১৬ বছর ধরে স্বর্ণ ব্যবসা করেন। সর্বশেষ কিছুদিন আগেও এক জায়গা থেকে ২০ লাখ, আরেক জায়গা থেকে ৯ লাখ টাকা ঋণ করেছেন। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন জায়গায় তিনি ঋণী।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘আনোয়ার হোসেন নামের এই রোগীর অবস্থা স্ট্যাবল (স্থিতিশীল)। তাঁকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। জীবননাশের ঝুঁকি নেই। তাঁর অণ্ডকোষে একটি ক্ষত আছে। সেখানে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর শরীরে বুলেটের যে ৩টি ক্ষত হয়েছিল, সেগুলোতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তবে কোনো বুলেট শরীরে পাওয়া যায়নি।’

চিকিৎসক আরও বলেন, ‘তাঁর শরীরে ধারালো অস্ত্রের কয়েকটি আঘাত রয়েছে; বিশেষ করে কাঁধে একটি বড় আঘাত রয়েছে, সেটির জন্য অর্থোপেডিকস বিভাগের চিকিৎসকেরা রাতেই অস্ত্রোপচার করেছেন। আপাতত রোগী শঙ্কামুক্ত আছেন। তাঁকে পোস্ট-অপারেটিভ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence