নতুন কারিকুলাম নিয়ে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার চায় অভিভাবকরা

সংবাদ সম্মেলন
সংবাদ সম্মেলন  © সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জারি করা শিক্ষা কারিকুলাম বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করা অভিভাবকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারসহ ৮ দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন। 

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) তে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন।

তাদের আট দফা দাবিগুলো হলো- প্রাক-প্রাথমিক (প্লে, নার্সারি, কেজি) বইয়ের বোঝা থাকবে না। শিশুরা আনন্দের সঙ্গে খেলতে খেলতে শিখবে। তাদের মধ্যে সিভিক সেন্স তৈরি করতে হবে। প্রাথমিকে কোনো ভর্তি পরীক্ষা থাকবে না। প্রাথমিক হবে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা থাকবে। বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ৭০ নম্বর লিখিত ও ৩০ নম্বর শিখনকালীন ব্যবস্থা রাখতে হবে। আগামী ভারতে বই ছাপানো যাবে না। 

এছাড়াও সব ক্লাসের বই জানুয়ারি মাসের মধ্যে দিতে হবে। বিনামূল্যে নিম্নমানের বই দেয়া যাবে না। বইয়ে বিকৃত ইতিহাস স্থান দেওয়া যাবে না। সকল ধর্মের মর্যাদা সমুন্নত রেখে, যার যার ধর্মীয় বিশ্বাস মতে ধর্মীয় বই সম্পাদন করতে হবে। দলমত নির্বিশেষে বই সম্পাদন করতে হবে। প্রত্যেক শ্রেণীর বইয়ে ভদ্রতা, শিষ্টাচার, জন্যতা আদ সৌজন্যতা ভদ্রতা শিষ্টাচার, সৌজন্যতা, আদব-কায়দা, সত্যবাদিতা ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্ককে বিস্তর আলোচনা রাখতে হবে বলে জানা তারা।

আরও পড়ুন: একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন শুরু রোববার

 তিনি বলেন, ২০২৩ সালে গত সরকার একটি গণবিরোধী শিক্ষাক্রম চালু করে। শিক্ষাক্রমটি চালু করার পর এর সাথে জড়িত একটি চক্র শত শত কোটি টাকা দুর্নীতি করে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকেই ধ্বংসের মুখে ফেলে দেয়। আমরা দেখতে পেলাম ফিনল্যান্ডের কারিকুলামের আদলে আমাদের দেশের শিক্ষাক্রম করা হলো। যেহেতু বাংলাদেশ একটি অনুন্নত রাষ্ট্র এবং এদেশের মানুষের জীবন মান ও সংস্কৃতির সাথে এমন শিক্ষা ব্যবস্থা যায়না তাই বাংলাদেশের মানুষ এই বিতর্কিত শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হলো।

জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা সরকারকে এই কারিকুলাম বাতিলের আহ্বান জানালাম এবং আমাদের ৮ দফা দাবিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষাক্রম চালুর প্রস্তাবনা দিলাম। আমাদের দাবিগুলি সংসদেও উত্থাপিত হলো এবং সারাদেশের মানুষ এই শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে কথা বলতে লাগলো। কিন্তু আমাদের দাবিকে অযৌক্তিক বলে উড়িয়ে দিয়ে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আমাদেরকে কোচিং ব্যবসায়ী এবং গাইড ব্যবসায়ীর ট্যাগ লাগিয়ে দেন। এক পর্যায়ে আমাদের নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে আমাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রায় তিন মাসেরও অধিক সময় আমাদেরকে কারাবাস করতে হয় এবং পরবর্তীতে আমরা জামিনে মুক্ত হই।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ওপর অমানবিক জুলুম ও নির্যাতন করা হয়েছে। দীর্ঘ সময় আমাদেরকে জেলে বন্দি রাখার কারণে আমরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হই। বাক স্বাধীনতা কেড়ে বেঁচে থাকার অধিকার ক্ষুণ্ন করায় গত স্বৈরশাসকদের প্রতি তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারসহ ক্ষতিপূরণের দাবি জানাই।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা দেখতে পেয়েছি আমাদের সমস্ত দাবি মেনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন পরিপত্র জারি করেছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে  ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে  সেই সাথে আগামীতে যে নতুন কারিকুলাম চালু করা হবে তা অবশ্যই বাংলাদেশের শিল্প সংস্কৃতি ধর্ম জাতিসত্তা ইতিহাস ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিয়ে চালু করতে হবে বলে প্রস্তাব রাখেন তিনি

সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের সভাপতি কাজী সাইফুল হক পনিরের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক সদস্য তাপসী খান, আল আমিন হোসেন, কামরুল ইসলাম, খাদিজা বেগমসহ আরও অনেকে।

 

 

 


সর্বশেষ সংবাদ