দুর্নীতির অভিযোগে মাদরাসা শিক্ষককে নিজ কক্ষে অবরুদ্ধ করলেন এলাকাবাসী
- নেত্রকোনা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭:৫২ PM , আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:০২ PM
নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার এক মাদরাসা অধ্যক্ষকে ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে এলাকাবাসী। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে মাদরাসা ছাড়েন অধ্যক্ষ মুহিববুল্লাহ। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ওই মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটে। অবরুদ্ধ অধ্যক্ষের নাম এএমএম মুহিববুল্লাহ।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মনকান্দা গ্রামের সুলতানা পারভীন বিগত ১০-১২ বছর পূর্বে ওই মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে চাকরি নেন। পরে একই মাদরাসায় তার ছোট বোনকেও চাকরি দিতে গিয়ে অধ্যক্ষ মুহিববুল্লাহর সাথে টাকা লেনদেনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুজনের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। একপর্যায়ে মাদরাসায় দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে শিক্ষিকা সুলতানা পারভীনের বেতন বন্ধ করে দেন অধ্যক্ষ। পরে সুলতানা পারভীনও শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একটি মামলা করলে আদালত তা খারিজ করে দেয়। সম্প্রতি এলাকার লোকজন অধ্যক্ষ মুহিববুল্লাহর বিরুদ্ধে নিয়ম বর্হিভূতভাবে মাদরাসার এক একরেরও বেশি জায়গা বিক্রিসহ নানারকম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেন।
এদিকে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষিকা সুলতানা পারভীন স্থানীয় ইউপি সদস্য আলী উসমানসহ মনকান্দা গ্রামের শতাধিক লোকজনকে সাথে নিয়ে তার বেতন ভাতা বন্ধ রাখার কারণ ও অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানতে মাদরাসায় অধ্যক্ষ মুহিববুল্লাহর কাছে যান। এ সময় অধ্যক্ষের সাথে এলাকার লোকজনের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে উপস্থিত গ্রামবাসী অধ্যক্ষ মুহিববুল্লাহর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। পরে বিক্ষুদ্ধ লোকজন অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিসহ তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দেন এবং তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে থানা পুলিশ ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে এবং অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করে।
আরও পড়ুন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ট্রাস্টি মন্ত্রিসভায়, সংসদে
শিক্ষিকা সুলতানা পারভীন বলেন, এখানে আমার চাকরি হয়েছে ১০-১২ বছর আগে। আমার চাকরি হওয়ার পর আমার বোনকে এখানে চাকরি দিতে অধ্যক্ষকে টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু চাকরি হয়নি। এরপর থেকে আমাকে নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন শুরু করেন অধ্যক্ষ। একপর্যায়ে আমার বেতন বন্ধ করে দেন। একুশ মাস ধরে আমার বেতন বন্ধ রয়েছে। আমি তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলাম। কিন্তু মামলাটি খারিজ হয়ে গেছে। আমার মানবেতর জীবনযাপনের বিষয়টি গ্রামের লোকজনকে জানালে তারা অধ্যক্ষের কাছে যান। কিন্তু তিনি গ্রামের লোকজনকেও অপমান করেছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আলী উসমান বলেন, অধ্যক্ষ মুহিববুল্লাহ তার ইচ্ছে মতো মাদরাসা পরিচালনা করে আসছেন। তিনি কখন, কাকে নিয়ে কি করেন তা আমরা কেউ কিছু জানি না। মাদরাসাটিকে তিনি অনিয়ম-দুর্নীতির ভাগাড়ে পরিণত করেছেন। আমরা এসব অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত সাপেক্ষে বিচার চাই এবং অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি করি।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ এএমএম মুহিববুল্লাহ বলেন, আমি কোনো রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করিনি। এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। মাদরাসার ভবন নির্মাণের জন্য ৫৮ শতাংশ জায়গা স্থানীয় একজনের সাথে এওয়াজ বদল করেছি। আর শিক্ষিকা সুলতানা পারভীনকে মাদরাসায় আসার জন্য নোটিশ করেছি। কিন্তু তিনি আসেন না। মাদরাসায় না এলে তো বেতন বন্ধ থাকবেই।
তবে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখার বিষয়ে তিনি কোনো আইনগত সহায়তা নিবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ উপজেলা মাদরাসা শিক্ষক নেতাদের সাথে পরামর্শ করে এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
কেন্দুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক রুকন উদ্দিন বলেন, আমরা খবর পেয়ে মনকান্দা এমইউ আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে মাদ্রাসা থেকে উদ্ধার করি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।