প্রেমিকের সঙ্গে ঝগড়ার পর অভিমানে গলায় ফাঁস নেন জাবি ছাত্রী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

প্রেমিকের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে গলায় ফাঁস দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী কাজী সামিতা আশকা। শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত ৯ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে আমবাগান এলাকায় নিজ কক্ষের দরজা ভেঙে আশকার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেন সহপাঠীরা। এরপর সাভারের এনাম হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বন্ধুর সঙ্গে ঝগড়া করে অভিমানে আশকা আত্মহত্যা করেছেন বলে জানান সহপাঠীরা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার সদর উপজেলায়।

আমবাগান এলাকায় দ্বিতীয় বর্ষের (৫০ ব্যাচ) চারজন জুনিয়র শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন আশকা। সহপাঠীরা জানান, ঘটনার সময় তার রুমমেটরা কেউ বাসায় ছিলেন না। তার প্রেমিক শাহরিয়ার জামান তুর্য খুলনা থেকে মোবাইল ফোনে জানালে ঘটনাস্থলে ছুটে যান রুমমেট ও সহপাঠীরা। এরপর সেখানে পৌঁছে তারা আশকাকে রুমের সিলিংয়ের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।

আশকার রুমমেট শর্মী ও মাইশা জানান, তারা শুক্রবার সন্ধ্যায় কেউই বাসায় ছিলেন না। মাইশা সন্ধ্যার কিছু আগে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আশকাকে তার বন্ধু তূর্যের সঙ্গে ভিডিও কলে ঝগড়া করতে দেখেন। পরে রাত সাড়ে ৮টায় আশকার বান্ধবী সামিহাকে ফোন করে দ্রুত বাসায় যেতে বলেন তূর্য। বাসায় গিয়ে তারা রুমের দরজা বন্ধ দেখতে পান। এরপর বাইরে থেকে দরজা ভেঙে তারা তাকে উদ্ধার করেন।

প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যান। পরে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে সাভারের এনাম হাসপাতালের পাঠানোর কথা বলেন। আশকার প্রেমিক শাহরিয়ার জামান তূর্য খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।  

তিনি বলেন, ‘আমি ও আশকা ভিডিও কলে কথা বলছিলাম। ছোট বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়। সেটা নিয়ে আশকা আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তখন ফোন কেটে যায়। আমি বারবার চেষ্টা করেও তাকে পাইনি। তখন তার রুমমেট ও বন্ধুদের জানাই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হোসনে আরা বেবী বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা আমাকে ফোন করে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা করে দিতে বলে। পরে আমরা হাসপাতালে গিয়ে আশকার আত্মহত্যার কথা জানতে পারি। তার মৃত্যুটি অস্বাভাবিক ছিল। প্রেমিকের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে এমন অকাল মৃত্যু কাম্য নয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মো. লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ বলেন, বর্তমান যুগে ভার্চুয়ালি যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম প্রযুক্তি হলেও তরুণদের মধ্যে একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করে দিয়েছে। এতে তারা একাকিত্বে ভুগছে। খুব সহজেই তারা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে। আত্মহত্যা একটা বড় কারণ। এছাড়া আমাদের ধৈর্য অনেকটা কমে গেছে। আমরা কোনোকিছুতে চাপ নিতে পারি না।

তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে আমাদের জীবনটা স্ট্রাগলের। এখনকার তরুণদের এ স্ট্রাগল করার মানসিকতা খুব কম। এটি ডেভলপ করতে হবে। এত সহজেই হতাশ হলে চলবে না। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে গত মিটিংয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, যারা এমন ঝুঁকির মধ্যে আছে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নিয়মিত পরীক্ষা নেওয়া হবে। আমরা এর আগে এমন কিছু শিক্ষার্থীর কাউন্সিলিং করেছিলাম এবং পরে শুনেছি তারা ভালো আছে। ভবিষ্যতেও এমন শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।


সর্বশেষ সংবাদ