সাইফ ‘মায়ের দেশ’ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে খেললেন ম্যাচসেরা ইনিংস, যেভাবে হলেন ক্রিকেটার
- টিডিসি স্পোর্টস
- প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:১৬ PM , আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:১৬ PM
এশিয়া কাপে ওপেনিং জুটি যদি পারভেজ হোসেন ইমন ও তানজিদ হাসান তামিমের ওপর নির্ভর করেই ভালোভাবে কাজে লেগে যেত, তাহলে দর্শকরা হয়তো মাঠে সাইফ হাসানকে দেখতে পেতেন না। ভাগ্যিস তা হয়নি! শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সুযোগ পেয়ে যে ইনিংসটি খেললেন সাইফ, সেটি শুধু সময়ের চাহিদা পূরণ করেনি, ক্রিকেটপ্রেমীর চোখের ক্ষুধাও মিটিয়েছে। কবজির মোচড়ে দারুণ সব শটে ভরিয়ে তুললেন মাঠ।
এ বড় কাকতালীয়, সাইফ ইনিংসটি খেললেন তার ‘মায়ের দেশ’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সাইফের বাবা বাংলাদেশি হলেও মা শ্রীলঙ্কান। মায়ের দেশের বিপক্ষেই ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটি খেলে ‘নিজের দেশ’ বাংলাদেশকে জেতালেন তিনি। এর মধ্য দিয়েই ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো জিতলেন ম্যাচসেরার পুরস্কার।
মায়ের দেশের বিপক্ষে ম্যাচ বলেই কি না কে জানে, সাইফ শুরু থেকেই ছিলেন ‘মেইন ক্যারেকটার এনার্জি’তে। দারুণ দুটো ক্যাচ নিলেন শ্রীলংকান ইনিংসে, ইতি ঘটালেন দুই লংকান ওপেনারের।
এরপর ব্যাট হাতে যখন নামলেন, তখন তার সামনে ১৬৯ রানের ‘এভারেস্টসম’ লক্ষ্য। যে লক্ষ্য শেষ চার বছরে ১৫ বারের চেষ্টায় বাংলাদেশ তাড়া করতে পেরেছে মোটে ১ বার! এমন পরিস্থিতিতে ওপেনিংসঙ্গী তানজিদ হাসান তামিমকে বিদায় নিতে দেখলেন শুরুতেই। তাতে চাপটা ক্রমেই বাড়ছিল বাংলাদেশের ওপর।
নুয়ান তুষারাকে এক চার আর এক ছক্কা হাঁকিয়ে শুরু করলেন প্রতি আক্রমণ। পাওয়ারপ্লে শেষের আগে ছক্কা হাঁকালেন আরও দুটো। পাওয়ারপ্লে শেষে লিটন যখন ফিরলেন, তখন চাপে পড়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল বাংলাদেশের। তবে দুনিথ ভেল্লালাগেকে ছক্কা হাঁকিয়ে সে চাপটাকেও জাঁকিয়ে বসতে দেননি তিনি, আছড়ে ফেলেন এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে সীমানার বাইরে।
সাইফের ক্যারিয়ারে আরও একটা ফিফটি ছিল। ২০২৩ এশিয়ান গেমসে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে। ৫০ রানের সে ইনিংসটাকে টপকে যান দ্রুতই। শেষমেশ গিয়ে থামেন ৪৫ বল খেলে ৬১ রানে। তার এই ইনিংস বাংলাদেশকে কক্ষপথে এনে দিয়েছিল, সে কারণে ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও উঠেছে তারই হাতে।
সাইফের জন্য উপলক্ষটা একটু বেশি বিশেষ প্রতিপক্ষ শ্রীলংকা বলেই হয়তো! এই শ্রীলংকায় যে তার মায়ের দেশ। সাইফের বাবা হাসান রেজা বাংলাদেশি। কিন্তু মা একজন শ্রীলঙ্কান। সাইফের বাবা সৌদি আরবে থাকা অবস্থায় দুজনের পরিচয় এবং ভালো লাগা। পরে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন দুজন। সাইফ জন্মের পর থেকে সৌদি আরবেই ছিলেন। এরপর সাইফের যখন ১০ বছর বয়স, বাংলাদেশে ফেরত আসে তার পরিবার।
পরিবারের অমতে বিয়ে করায় সাইফের মায়ের আর অনেক বছর শ্রীলঙ্কা যাওয়া হয়নি। নানাবাড়ি যাওয়া হয়নি সাইফেরও। নানাবাড়ির গল্প শুনে শুনেই বড় হয়েছেন জাতীয় দলের এই তরুণ ওপেনার। পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার পর তবেই মায়ের পক্ষের পরিবারের সঙ্গে দেখা হয় সাইফের। বয়সভিত্তিক দল ও বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে শ্রীলঙ্কা সফর করেছেন সাইফ। তখন দেখা হয়েছে তার নানা বাড়ির লোকজনের সঙ্গে।
২০১৬ সালে প্রথম শ্রীলঙ্কায় বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলতে যান সাইফ। সেখানেই সাইফের মায়ের পরিবারের সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎ। নিজেদের মেয়ের একমাত্র ছেলেকে প্রথমবার দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন সাইফের নানার বাড়ির সদস্যরা। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার পরও তাদের সঙ্গে দেখা হয় সাইফের।
আরবের জল–হাওয়ায় বড় হওয়া সাইফ দেশের বাইরেই জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন। দেশে ফিরেছেন শুধু ক্রিকেটের টানে। ১০ বছর বয়সে দেশে ফেরার পর ধানমন্ডির একটি ক্রিকেট একাডেমিতে সাইফকে ভর্তি করিয়ে দেন তার বাবা। এরপর সেই সাইফই নিউজিল্যান্ডে ২০১৮ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন। দল তার অধীনে খেলে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে।
এরপর ঘরোয়া ক্রিকেট, ‘এ’ দল ও বিসিবি হাইপারফরম্যান্স দলের হয়ে পারফর্ম করে ২০১৯ সালের নভেম্বরে ভারত সফরে প্রথম জাতীয় দলে ডাক পান সাইফ। ভারতে অভিষেক না হলেও পরের সিরিজেই পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে টেস্ট অভিষেক হয় এই ডানহাতি ওপেনারের। নিয়মিত ওপেনার সাদমান ইসলাম চোটে পড়ায় দেশের হয়ে টানা দুটি টেস্ট খেলেন সাইফ। এখন জাতীয় দলের প্রায় নিয়মিত সদস্য তিনি।