৫-৬ বছর পর দ্রব্যমূল্য কত বাড়বে, সেটা মাথায় রেখে পে স্কেল নির্ধারণ করতে হবে
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০২:২৬ PM , আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:২২ PM
সরকারি কর্মচারীদের নতুন পে-স্কেল নির্ধারণের সময় শুধু বর্তমান নয়, আগামী ৫ থেকে ৬ বছরের সম্ভাব্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় নিয়ে বেতন নির্ধারণ করতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র আব্দুল মালেক। সম্প্রতি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।
এ বিষয়ে আব্দুল মালেক বলেন, যখনই পে স্কেল দেয় তখনই দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে এই কমিশন ঘোষণার আগে ও পরে কয়েক দফায় দাম বাড়ানো হয়েছে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই পে স্কেল নির্ধারণ করতে হবে। আবার এখন যদি পে স্কেল দেয় তাহলে আগামী ৫-৬ বছর দেবে না। এই ৫-৬ বছরে কিন্তু দ্রব্যমূল্য বাড়বে। এটা মাথায় রেখেও সার্বিকভাবে বিচার বিশ্লেষণ করেই বেতন নির্ধারণ করতে হবে। তাই আমরা আগামী ৫-৬ বছরে দ্রব্যের দাম কতটা বাড়তে পারে সেটি বিবেচনায় নিয়ে পে স্কেল নির্ধারণের আহবান জানাচ্ছি।
বেতন বাড়ালে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে, সেক্ষেত্রে বেতন বাড়ালেই কি দুঃখ-দুর্দশা কমবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেতন বাড়ানোর সাথে সাথে মূল্যস্ফীতিও যেন না বাড়ে সরকারকে সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। আর বেতন বাড়ালেই যে মূল্যস্ফীতি বাড়ে বিষয়টি কিন্তু এমনও নয়। তবে বেতন বাড়ার সাথে যদি দ্রব্যমূল্যও দ্বিগুণ হারে বাড়ে তাহলে তো আর আমরা বেনিফিটেড হব না। এক্ষেত্রে বাজারকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা পে কমিশনে সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছি। এর কারণ সর্বশেষ পে স্কেল ২০১৫ সালে হয়েছে। এরপর ২০২০ সালে হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। এতে কর্মচারীরা আর্থিকভাবে বিরাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিয়মিত হলে ২০২০ সালে বেতন ডাবল হতো। ২০২৫ সালে নরমাল পে স্কেল হলে সর্বনিম্ন ৩৩ হাজার টাকা হতো। এই ১০ বছর এবং দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি সমন্বয় করেই আমরা এমন প্রস্তাব দিয়েছি।
এখন বেতন ১:১০ অনুপাতে জানিয়ে সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের এই নেতা বলেন, এটি বিরাট বৈষম্য। ১:৪ বাস্তবায়ন সম্ভব। তবে এটি হতেই হবে, এমন না। আমরা চাই, বৈষম্যটা কমে আসুক। পে স্কেল দিলে দাম কয়েকবার বাড়ে। ইতিমধ্যে বাড়িয়েছে। এটি মাথায় রেখেই পে স্কেল দিতে হবে। আগামী ৫ বছরের কথাও মাথায় রাখতে হবে।
এর সঙ্গে মিল রেখে প্রাইভেট খাতেও বেতন বৃদ্ধির আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, পে স্কেলে এটি রাখা হয় সাধারণত। এবার প্রাইভেট খাতও মতামতের জন্য ডাকা হয়েছে। একজন ডাল-ভর্তা-ভাত খেলেও প্রতি বেলা ৫০ টাকা হিসেবে তিনবেলা খেলে ১৫০ টাকা খরচ হয়। সরকার ছয়জনের হিসাব করতে বলেছে। তাদের মাসে খরচ আসে ২৭ হাজার টাকা।
আব্দুল মালেক বলেন, ডাল-ভাত-ভর্তা খেতেই যদি এ টাকা লাগে, তাহলে সারা মাস কি এ খাবারই খাবে। আমিষসহ বাসা ভাড়া, সন্তানের পড়াশোনা, বাবা-মায়ের চিকিৎসাসহ যাতায়াতসহ সব মিলিয়ে ৫০ হাজারেও হয় না। অনেকে পাচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। অনেকে লজ্জা লুকিয়ে অটোরিকশাও চালান। মূল্যস্ফীতি যাতে না বাড়ে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এসব চিন্তা যখন থাকবে না, বেতন ভালো পাবেন, তখন তাদের সেবার মান বাড়বে।
উল্লেখ্য, অনলাইনে দুই হাজারের বেশি সংগঠন নতুন পে স্কেল নিয়ে তাদের মতামত জমা দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে ২৫০-৩০০ সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়ের করেছে কমিশন। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করে পে কমিশন। এর পরেই সব মতামত পর্যালোচনা করে সুপারিশের খসড়া করা হবে। তখন সব সদস্যের সম্মতিতে চূড়ান্ত করে জমা দেওয়া হবে সুপারিশ।
কমিশনের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, এই পে কমিশনের মূল লক্ষ্য হলো বেতন বৈষম্য হ্রাস করা। এজন্য বিদ্যমান গ্রেড কাঠামো পুনর্বিন্যাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্রেড কমিয়ে বৈষম্য কমানো হবে, এটি নিশ্চিত। তবে কতটি গ্রেড থাকবে এবং সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত কী হবে, তা চূড়ান্ত সুপারিশ প্রকাশের সময় জানা যাবে।