জনকণ্ঠ দখলের অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’, সংবাদ সম্মেলনে দাবি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৪৭ PM , আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০২৫, ১০:৫৪ AM
কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা দেশের অন্যতম শীর্ষ দৈনিক জনকণ্ঠকে দখলে নিয়েছে বলে সম্প্রতি একটি অডিও রেকর্ডে দাবি করেন পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক শামীমা এ খান। একইসঙ্গে পত্রিকাটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজের টেমপ্লেট কালো করার কোনো নির্দেশনা দেননি, বরং লাল করার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান। কিন্তু এসব দাবির পুরোটাই ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন পত্রিকাটির সাংবাদিক ও কর্মচারীরা। একইসঙ্গে তারা মালিকপক্ষকে ‘ট্যাগ’ লাগানোর অপচেষ্টা থেকে সরে এসে পত্রিকাটির সাবেক ও বর্তমান যেসব সাংবাদিক ও কর্মচারীর বেতন বকেয়া রয়েছে, তাদের বকেয়া পরিশোধের আল্টিমেটাম দেন।
আজ সোমবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর ইস্কাটনে পত্রিকার নিজস্ব ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাংগঠনিক সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) কোষাধ্যাক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন, নির্বাহী সদস্য আব্দুল্লাহ মজুমদারসহ পত্রিকাটির সাংবাদিকসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে পত্রিকাটির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ও ডেপুটি চিফ রিপোর্টার ইসরাফিল ফরাজি ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জনকণ্ঠের অফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থাকার পরও ৩১ জুলাই রাত ‘২৫ আগস্ট’ নামে একটি হোয়াটঅ্যাপ গ্রুপ তৈরী করা হয় গ্লোব-জনকন্ঠ শিল্প গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান জিশাল এ খানের নির্দেশে। এরপর রিপোর্টিং, অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়ায় কর্মরত সকল সাংবাদিককে গ্রুপে যুক্ত করে নিউজ ফেসবুকে আপলোডের ক্ষেত্রে টেমপ্লেট কালো করতে অনলাইন বিভাগকে নির্দেশ দেন। মূলত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল গ্রুপে সজীব ওয়াজেদ জয়ের আগস্ট মাসে কালো ব্যাচ ধারণের কর্মসূচীর সঙ্গে সমন্বয় করে এই নির্দেশনা দেয়া হয়। এ বিষয়ে আমাদের কয়েকজন সাংবাদিক কারণ জানতে চাইলে তাদেরকে চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের হুমকি দেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে এবং রক্তাক্ত জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণে আমরা পরদিন পত্রিকার কভার পেইজ লাল করি, সকলের সম্মিলিত পরামর্শে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২ জুলাই আমাদের ২০ জন সাংবাদিককে চাকরি থেকে বহিস্কার করে মালিকপক্ষ।
ডিইউজের কোষাধ্যাক্ষ খন্দকার আলমগীর বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান দখল করা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাজ না। আমরা এসেছি আমাদের সহকর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবীতে। বিগত সময়ে অনেক গণমাধ্যমে জুলাই আন্দোলনের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখেছে, কিন্তু সে সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়নি। সেখানে আমাদের সহকর্মীরা কাজ করছেন, তাদের পরিবার আছে। আমরা চাই জনকণ্ঠের মালিকপক্ষের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। এই প্রতিষ্ঠানে পূর্বে ও বর্তমানে আমাদের যে সব সহকর্মীরা দীর্ঘ ১০-১২ মাস যাবত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না, অবিলম্বে তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হোক।
এসময় বিএফইউজে’র সাংগঠনিক সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে ৩০ জন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সংবাদপত্রের ইতিহাসে একসঙ্গে ৩০ জন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করার নজির নেই, যদি লে-অফ না করা হয়। এই জনকণ্ঠ প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে বন্ধ করে দেয়ার জন্য। এখানে সংবাদকর্মীদের প্রায় ১৫ কোটি টাকা বকেয়া। বেনিফিটসহ এটা প্রায় ৩০-৪০ কোটি টাকার দায়। যদি বন্ধ করে দেয়া হয় আমাদের ভাইয়েরা যাবে কোথায়? আমি বলতে চাই, বর্তমান সময়ে এসে দেশের কোন সংবাদমাধ্যম বন্ধ করার সুযোগ নেই। সংবাদপত্র অন্যান্য ব্যবসার মতো নয়, হুট করে বন্ধ করা যায় না। বাসায় বসে থেকে পত্রিকা চালানো যায় না। অবিলম্বে আপনি এখানে আসুন, যাদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাদের পুনর্বহাল করুন। সকলের বকেয়া বেতন পরিশোধ করুন।
পত্রিকাটির ডিজিটাল টিমের এডভাইজার ও সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য সাবরিনা বিনতে আহমদ বলেন, আমরা মালিকপক্ষের সকল অনাচার, অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চাই। কর্পোরেট মানেই অমানবিক, এই ধারার পরিবর্তন চাই। এই প্রতিষ্ঠান থেকেই তার শুরু হোক।
এসময় তিনি জনকণ্ঠে কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে আট দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো-১. জুলাই বিপ্লবে শহীদদের অবমাননা করে পত্রিকাটি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাথে সঙ্গতি রেখে কালো টেমপ্লেট ধারণ করার জন্য জড়িত মালিক পক্ষকে শাস্তির আওতায় আনা, ২. লাল রং ধারণ করে পত্রিকাটি প্রকাশ করার কারণে জুলাই বিপ্লবের পক্ষের চাকুরিচ্যুত সকল সাংবাদিককে চাকুরিতে সসম্মানে পুনর্বহাল করা, ৩. মালিকপক্ষের ফ্যাসিবাদী বেশ ধারণের প্রতিবাদে আগামী ৬-৭ আগস্ট প্রিন্ট ভার্সনের পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি, ৪. যত দ্রুত সম্ভব সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রায় ১৫ কোটি টাকা বকেয়া বেতন পরিশোধ করা, ৫. এই প্রতিষ্ঠান থেকে অন্যায়ভাবে চাকুরিচ্যুত তিন শতাধিক ব্যক্তির পাওনা টাকা অবিলম্বে পরিশোধ করা, ৬. প্রতিষ্ঠানের সকল পাওনাদার মালিকপক্ষের অমানবিক আচরণের শিকার। দীর্ঘদিন যাবত অনেকেই অর্থাভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই দায় গ্লোব জনকণ্ঠের মালিককে নিতে হবে এবং অনতিবিলম্বে সকলের পাওনা পরিশোধ করা, ৭. অবিলম্বে সরকার থেকে একজন প্রশাসক নিয়োগ দেয়া এবং ৮. মামলার দায়েরকৃত আসামিদের যত দ্রুত সম্ভব গ্রেফতার করা।
সংবাদ সম্মেলনে শিল্প গ্রুপটির ভাইস চেয়ারম্যান জিশাল এ খানের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দেয়া বিভিন্ন নির্দেশগুলো তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া জনকণ্ঠ অফিসে হামলার সঙ্গে জড়িত দুইজন ব্যক্তির সিসি টিভি ফুটেজও প্রকাশ করা হয়। এসব ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়।