দেশের উষ্ণতম এলাকায় দুই প্রতিষ্ঠানের দ্বন্দ্বে বৃক্ষরোপণে বাধা

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস লিমিটেড ও নাটোর উপজেলা পরিষদ
নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস লিমিটেড ও নাটোর উপজেলা পরিষদ  © টিডিসি ফটো

নাটোর জেলার লালপুর দেশের সবচেয়ে উষ্ণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত; সেখানে ৬ কিলোমিটার খালের পাড়ে সরকারি সামাজিক বনায়ন প্রকল্প অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। বন বিভাগ এবং নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস লিমিটেডের মধ্যে বিরোধের জেরে গাছ লাগানো বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের আওতায় লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলার মিল-সংলগ্ন খালের পাড়ে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করে বন বিভাগ। উদ্দেশ্য ছিল পরিবেশ রক্ষা এবং উত্তপ্ত লালপুরে ছায়া সৃষ্টি। কিন্তু নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল কর্তৃপক্ষ ঐ জমিতে গাছ না লাগিয়ে বরং ঘাস লাগানোর জন্য লিজ প্রদান করে, যার ফলে প্রকল্পটি থমকে যায়।

উপজেলা বন কর্মকর্তা এবিএম আব্দুল্লাহ জানান, সুগার মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে গাছ লাগানোর অনুমতির ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা হঠাৎ আপত্তি জানায়। বর্ষাকাল চলে গেলে গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় চলে যাবে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে সুগার মিল কর্তৃপক্ষ প্রায় ১০-১২ কোটি টাকা লাভবান হতো, অথচ এখন তারা নামমাত্র মূল্যে ঘাস লাগানোর জন্য লিজ দিচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, ‘লালপুর এমনিতেই দেশের সবচেয়ে উষ্ণতম উপজেলা। এখানে গাছ না লাগানো হলে তাপমাত্রা আরও বাড়বে, পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অথচ সুগার মিল কর্তৃপক্ষ সরকারি বনায়ন প্রকল্পে বাধা দিচ্ছে। এটা শুধু বন বিভাগের বিরুদ্ধে নয়, পুরো পরিবেশের বিরুদ্ধে অবস্থান।’

পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রীন ভয়েসের লালপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন অভিযোগ করে বলেন, ‘মিলের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ব্যক্তিস্বার্থে ঘাস লাগানোর নামে অর্থ লোপাট করছে। আমরা মিল কর্তৃপক্ষের স্বৈরাচারী আচরণের প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং প্রয়োজন হলে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি কর্মসূচি গ্রহণ করব।’

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদ হোসেন ভূঁইয়া জানান, বন বিভাগ চুড়ান্ত আলোচনার বাইরে সরাসরি চুক্তিপত্র নিয়ে আসে, যা সরকারি প্রক্রিয়াগত নিয়মের পরিপন্থি। আমরা যথাযথ আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেব। খালের জমি ইতিমধ্যে ঘাস লাগানোর জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে।

লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেদী হাসান বলেন, ‘উষ্ণ লালপুরে বৃক্ষরোপণ জরুরি। এ জন্য সুগার মিল কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখনও উত্তর পাওয়া যায়নি।’

নাটোর জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন জানান, ইতোমধ্যে ইউএনও-কে উভয় পক্ষকে নিয়ে সমাধানের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ