প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে ৩০ লাখ টাকার জলমহাল ৩ লাখ টাকায় ব্যক্তি নামে ইজারা

সরকারি জলমহাল (ইনসেটে ইজারাগ্রহীতা কাজী আক্তার)
সরকারি জলমহাল (ইনসেটে ইজারাগ্রহীতা কাজী আক্তার)  © টিডিসি সম্পাদিত

হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌরসভার কাছারির পাশে অবস্থিত প্রায় ৬ দশমকি ৬৬ একর আয়তনের একটি সরকারি জলমহাল মৎস্য আইন ও জলমহাল ব্যবস্থাপনা বিধিমালা লঙ্ঘন করে ব্যক্তি নামে ইজারা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রকৃত বাজারমূল্যে যেখানে ৫ বছরে ইজারার মূল্য ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা হওয়ার কথা, সেখানে ভ্যাটসহ মাত্র ৩ লাখ টাকায় জলমহালটি লিজ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় মৎস্যজীবী সংগঠন ও অভিজ্ঞদের দাবি, সংশ্লিষ্ট জলমহালটি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির মাধ্যমে উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায় ইজারা দেওয়া হলে সরকার উল্লেখযোগ্য রাজস্ব পেত। কিন্তু প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে নামমাত্র মূল্যে ব্যক্তি নামে জলমহালটি ইজারা দেওয়া হয়েছে, যা সরাসরি সরকারি সম্পদের অপব্যবহার।

অভিযোগ অনুযায়ী, মাধবপুর পৌরসভার প্রভাবশালী আক্তার কাজী নামের এক ব্যক্তি পাঁচ বছরের জন্য জলমহালটি লিজ গ্রহণ করেন, যা মৎস্য আইন ২০০৯-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কারণ প্রচলিত আইন অনুযায়ী, জলমহাল ব্যক্তি নয়—প্রকৃত মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির কাছেই ইজারা দেওয়ার বিধান রয়েছে।

জানা গেছে, জলমহালটি নিয়ে স্থানীয় গোয়ালনগর সাহারা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি ইতোমধ্যে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেছে (রিট নং–১৪১৮৫/২৪)। তবে ওই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়া সত্ত্বেও স্থানীয় ভূমি অফিসের তহশিলদার সোহেল রানার দেওয়া একটি বিতর্কিত ও ভুয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ বিন কাশেম আক্তার কাজীকে জলমহালটির ইজারা প্রদান করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় একাধিক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। একই সঙ্গে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

রিটকারী সংগঠনের সভাপতি বিমল চন্দ্র দাস বলেন, “মোটা অঙ্কের কমিশনের বিনিময়ে প্রহসনের মাধ্যমে ব্যক্তি নামে অবৈধভাবে জলমহাল লিজ দেওয়া হয়েছে। এটি একধরনের ‘পুকুর চুরি’ এবং চরম দুর্নীতি। এর ফলে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অবিলম্বে তদন্ত করে এই লিজ বাতিল করে জলমহালটি প্রকৃত মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির কাছে হস্তান্তর করাই সময়ের দাবি।’

অভিযোগের বিষয়ে লিজগ্রহীতা কাজী আক্তার বলেন, ‘আমরা যা করেছি সবই বিধি মোতাবেক করেছি। আদালতের নির্দেশনার ভিত্তিতেই কাজ হয়েছে। আমাদের কোনো অনিয়ম নেই।’

অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ বিন কাশেম বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। আক্তার কাজীর করা একটি রিভিউ আবেদনের রায়ের ভিত্তিতেই তাকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।’

এদিকে স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, লিজগ্রহীতা চুক্তিনামার শর্ত ভঙ্গ করে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে জলমহালে তিনটি পাম্প বসিয়ে পানি নিষ্কাশন করছেন। এতে পরিবেশ, জলজ প্রাণী ও স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা অবিলম্বে এ কার্যক্রম বন্ধে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক এরশাদ আলী বলেন, ‘সরকারি রাজস্ব ক্ষতির কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে এটি একটি ভয়াবহ দুর্নীতির ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হবে। বিষয়টি তদন্তের জন্য হেড অফিসে নোট পাঠানো হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!