লক্ষ্মীপুরে যাত্রীছাউনি দখল করে দোকানপাট, যাত্রীদের দুর্ভোগ
- লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৪১ PM
লক্ষ্মীপুরের সড়কের পাশে নির্মিত যাত্রীছাউনিগুলো এখন আর যাত্রীসেবার ভরসা নয়। কাগজে-কলমে যাত্রীদের জন্য গড়ে তোলা এসব অবকাঠামো বাস্তবে পরিণত হয়েছে অব্যবস্থা ও উদাসীনতার প্রতীকে। জনসেবার বড় বড় সাইনবোর্ড থাকলেও তার আড়ালে এখন চলছে দখলদারিত্বের দাপট। জেলা সদরসহ রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় একই চিত্র, ছাউনি থাকলেও সেখানে যাত্রীদের পা রাখার জায়গা নেই। যাত্রীছাউনি দখল করে চা দোকান, পান দোকান ও ফলের দোকান বসানো হয়েছে। ফলে যাত্রীসেবা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ের প্রধান বাজার এলাকায় যাত্রী ছাউনি থাকলেও অধিকাংশ বাস সেখানে থামে না। নির্ধারিত স্টপেজ উপেক্ষা করে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করানো হচ্ছে। এতে যাত্রীরা ছাউনির ভেতরে বসে অপেক্ষা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। রোদ ও বৃষ্টির মধ্যে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করাই এখন তাদের নিত্যদিনের ভোগান্তি। মূলত যাত্রীসেবার চেয়ে দখলদারদের বাণিজ্যিক স্বার্থই এখানে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
উপজেলা পর্যায়ে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। ঝুমুর এলাকা, রায়পুর, রামগঞ্জ ও চন্দ্রগঞ্জের বিভিন্ন বাজারের যাত্রীছাউনিতে যাত্রীর বদলে জায়গা করে নিয়েছে টিকিট কাউন্টার, চা দোকান, পান দোকান ও ফলের দোকান। কোথাও কোথাও ছাউনির ভেতরে সারি সারি চেয়ার ও টেবিল বসিয়ে স্থায়ী দোকানের রূপ দেওয়া হয়েছে। জনসেবার জন্য নির্মিত স্থাপনায় এখন চলছে ব্যক্তিগত মুনাফার মহোৎসব। এতে যাত্রীদের বসার জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে, অনেক স্থানে পুরোপুরি বিলুপ্ত।
জেলাজুড়ে প্রায় ১০০টির মতো যাত্রীছাউনি রয়েছে যার অধিকাংশই এখন দোকানের আসবাবপত্রের দখলে। নিয়ম অনুযায়ী একটি করে দোকান থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে ছাউনির দুই পাশে একাধিক দোকান বসানো হয়েছে। দোকানের চেয়ার ও টেবিল ছড়িয়ে রাখা হয়েছে ছাউনিজুড়ে। দখলদারিত্বের এমন দাপট যে সাধারণ যাত্রীরা দাঁড়ানোর জায়গাটুকুও পাচ্ছেন না। সরকারি অবকাঠামো এখন কতিপয় ব্যক্তির নিজস্ব গুদামঘরে পরিণত হয়েছে।
বাসচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্তঃজেলা বাসের নির্ধারিত দাঁড়ানোর জায়গা দখল করে রাখে দূরপাল্লার বাসগুলো। এতে ছাউনি থেকে ঠিকভাবে যাত্রী ওঠানামা করানো সম্ভব হয় না। অন্যদিকে দূরপাল্লার যাত্রীরাও ছাউনির ভেতরে বসার সুযোগ পাচ্ছেন না কারণ সেখানে রয়েছে প্রভাবশালী মহলের কাউন্টার ও দোকান। পরিবহন ব্যবস্থার এই বিশৃঙ্খলা দখলদারিত্বের সুযোগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
যাত্রীদের অভিযোগের পাহাড় জমলেও দেখার কেউ নেই। বসার মতো জায়গা না থাকায় বৃদ্ধ ও নারীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়েই তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের অপেক্ষা করতে হয়। সংস্কারের অভাবেও অনেক ছাউনির অবস্থা করুণ। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, জনসেবার নামে নির্মিত এই কোটি টাকার অবকাঠামো যদি দখলদারদের ভোগেই লাগে, তবে এই ব্যয়ের সার্থকতা কোথায়?
যাত্রীদের দুর্ভোগের অভিযোগ অস্বীকার করে দখলদার ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, তারা নাকি যাত্রী এলে বসার ব্যবস্থা করে দেন। তবে বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। অধিকাংশ সময়ই ছাউনির ভেতরটা আসবাবপত্রে ঠাসা থাকে। জনসেবার সাইনবোর্ডটি কেবল আইনি বাধা এড়ানোর ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, ভেতরে চলছে পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক কারবার।
এসব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আশরাফুন নাহার বলেন, দ্রুত এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে সচেতন মহলের মতে, নিয়মিত নজরদারি ও প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ ছাড়া এই দখলদারিত্বের দাপট থামানো সম্ভব নয়। সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা না ফিরলে যাত্রীসেবার নামে নির্মিত এসব ছাউনি অচিরেই পুরোপুরি হকার ও দোকানদারদের বাণিজ্যিক আস্তানায় পরিণত হবে।