৪ পদে নিয়োগ: স্বজনপ্রীতি ও অর্ধকোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ মাদ্রাসা সুপার ও সভাপতির বিরুদ্ধে
- পাবনা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৩১ PM , আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১৭ PM
পাবনার চাটমোহর উপজেলার জগতলা সিদ্দিকীয়া দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসায় নিয়োগ কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। মাদ্রাসার সভাপতি বুলবুল আহমেদ ও সুপার আবুল হোসেন যোগসাজশে অর্ধকোটি টাকার বিনিময়ে নিজের আত্মীয়-স্বজনদের নিয়োগ দিয়েছেন এক চাকরিপ্রার্থী। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
তাদের নিয়োগের সুপারিশ বাতিল করে পুনরায় নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের প্রার্থী রাকিবুল ইসলাম।
লিখিত অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বর চারটি পদে পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পদ চারটি হলো, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, ল্যাব সহকারী, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া। তার মধ্যে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে আবেদন করেন ভুক্তভোগী জগতলা গ্রামের মৃত আবুল মাসুদের ছেলে রাকিবুল ইসলাম। প্রথম দফায় গত ৮ নভেম্বর পরীক্ষার জন্য প্রবেশপত্র পান তিনি। যথারীতি মাদ্রাসায় উপস্থিত হলেও সেদিন সভাপতি বা সুপার কেউ মাদ্রাসায় উপস্থিত ছিলেন না। পরে তিনি জানতে পারেন পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, দ্বিতীয় দফায় ১২ ডিসেম্বর পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পর রাকিবুল জানতে পারেন, মাদ্রাসার সভাপতি বুলবুল আহমেদ ও সুপার আবুল হোসেন যোগসাজশে অর্ধকোটি টাকার বিনিময়ে সভাপতির আপন ফুপাতো ভাই তারেক মাহমুদ কে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে এবং আপন চাচাতো বোন রাবেয়া খাতুনকে আয়া পদে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখিয়ে নিয়োগে সুপারিশ করেছেন।
এতে আরও বলা হয়, অন্যদিকে সুপার আবুল হোসেন মোটা অঙ্কের টাকায় তার পরিচিত আলমগীর হোসেন নামের একজনকে ল্যাব সহকারী পদে এবং স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা ও সাবেক মেম্বার আনোয়ার হোসেনের ভাতিজা নয়ন হোসেনকে নিরাপত্তা কর্মী পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
ওই চাকরিপ্রার্থীর দাবি, নিয়ম অনুযায়ী সভাপতির নিকট আত্মীয় প্রার্থী থাকলে তিনি নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি থাকতে পারবেন না। অথচ মাদ্রাসার সভাপতি বুলবুল আহমেদ তার আপন ফুপাতো ভাই ও চাচাতো বোনকে নিয়োগ দিতে নিজেই নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হন। এছাড়া তারেক মাহমুদ নির্ধারিত সময়ে আবেদন না করলেও ভুয়া ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
মাদ্রাসার সুপার আবুল হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যারা নির্বাচিত হতে পারেন না, তারা এমন অভিযোগ করেন। অভিযোগ যে কেউ দিতেই পারে। কিন্তু সেটা তো যাচাই বাছাই করতে হবে কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা। টাকার লেনদেন কারো সাথে হয়নি। আমি এসবের সাথে জড়িত নই।
মাদ্রাসার সভাপতি বুলবুল আহমেদ বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা নিয়েছেন ঢাকা থেকে আসা ডিডি প্রতিনিধি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ আরও দু’জন। আমি শুধু ফলাফলে স্বাক্ষর করেছি। আমার ফুপাতো ভাই ও চাচাতো বোনের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। তারা আমার রক্তের কেউ না। তাই নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি হতে বাধা ছিল না। যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার ভিত্তি নেই।
চাটমোহর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শফিউল ইসলাম বলেন, নিয়োগের আগে প্রার্থী যাচাই বাছাই করেছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। আমরা তাৎক্ষণিক ওইদিনই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরীক্ষা নিয়েছি। পরীক্ষা শেষে ফলাফল দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।
এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যাচাই বাছাই সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।