পাবনায় সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলছে, ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা

কর্মবিরতি পালন করছেন সহকারী শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার সকালে পাবনা সদর উপজেলার ভাঁজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
কর্মবিরতি পালন করছেন সহকারী শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার সকালে পাবনা সদর উপজেলার ভাঁজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে  © টিডিসি

দেশের অন্যান্য স্থানের মতো পাবনা জেলাতেও তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন। এতে বন্ধ রয়েছে শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। বার্ষিক পরীক্ষার সামনে শিক্ষকদের এমন কর্মসূচি পালনে ক্ষুব্ধ অভিভাবকসহ সচেতন মহল। 

আজ বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল থেকে এই কর্মসূচি পালন শুরু করেন তারা। 

সদর উপজেলার ভাঁজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে এসেছেন। কিন্তু তারা কর্মবিরতি পালন করায় কোনো ক্লাস নেয়া হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের। তারা শিক্ষক কক্ষে কেউবা রোদে বসে আছেন। শিক্ষার্থীরা যত্রতত্র খেলাধুলা করছে। 

স্কুলটির সহকারী শিক্ষক সাইদ উল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের তিন দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে  প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহবানে কর্মবিরতি পালন করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনিদিষ্টকালের কর্মবিরতি চলবে।’

পূর্ব রাঘবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘এখন আমাদের কেন্দ্রীয় সংগঠন যে কর্মসূচী দিয়েছে আমরা সেটা পালন করছি। কারণ আমাদের দাবিগুলো দীর্ঘবছর ধরে মানা হচ্ছে না। দাবিগুলো হলো- সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে নির্ধারণ, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতার অবসান এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।’

এদিকে, বার্ষিক পরীক্ষার সামনে এসে হঠাৎ এ আন্দোলন জোরদার করে শিক্ষকরা অমানবিক কাজ করছেন বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন অভিভাবকসহ সচেতন মহল।

আরও পড়ুন: ভুয়া বিল-ভাউচারে ১৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রতিষ্ঠানপ্রধানের বিরুদ্ধে

পাবনার মালিগাছা গ্রামের এক অভিভাবক মিজানুর রহমান বলেন, ‘দাবি আদায়ে সারা বছর দেশে আন্দোলন একের পর এক লেগেই থাকে। কিন্তু শিক্ষকরা যখন আমাদের সন্তানদের জিম্মি করে তাদের লেখাপড়া নষ্ট করে আন্দোলনে নামেন তখন হতাশ হওয়া ছাড়া কী করার আছে।’

আরিফপুর গ্রামের অভিভাবক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কিছুদিন পরই বার্ষিক পরীক্ষ শিশুদের। এই সময়ে এসে কর্মবিরতি পালন করা শিক্ষকদের মোটেই ঠিক নয়। তারা পরীক্ষা শেষ করে তারপর করতে পারতেন। আমাদের সন্তানদের যে ক্ষতি হচ্ছে তা দেখবে কে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকদের কর্মসূচী স্থগিত করার দাবি এ অভিভাবকের।’

পাবনা সদর উপজেলা শিক্ষা কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি ও নিয়ামতুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আরিছুর রহমান হীরা বলেন, ‘আমরাও তো অসহায়। আমরা তো চাই না কোমলমতী শিশুদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে। গত ৮ নভেম্বরের শাহবাগের আন্দোলনে আমাদের দুই শতাধিক শিক্ষক আহত হন। আমাদের এক বোন মারা যান। সরকার আন্তরিকতা দেখিয়ে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু বিগত ১৫ দিনে তার কোনো বাস্তবায়ন নেই। তাই আমাদের ১১টি সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ঐক্যমতের ভিত্তিতে সারাদেশে এই কর্মসূচীর ডাক দিয়েছেন। আমরা আশা করবো সরকার দ্রুত আমাদের দাবি বাস্তবায়ন করবে।’

পাবনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আশরাফুল কবীর বলেন, ‘একজন সরকারি কর্মককর্তা বা কর্মচারী হয়ে কি আমরা এটা করতে পারি বলেন? এটা তো ঠিক না। বাচ্চাদের বার্ষিক পরীক্ষা সামনে। ইতিমধ্যে রুটিন দিয়ে দেয়া হয়েছে। ১ ডিসেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পরীক্ষা। এখন তারা এটারই সুযোগ নিচ্ছেন। আমরা তাদের বারবার অনুরোধ করেছি কর্মসূচী স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার জন্য। কিন্তু তারা যদি না মানে সরকার যেভাবে ব্যবস্থা নিতে বলে আমরা সেভাবে ব্যবস্থা নেব।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যানুযায়ী, পাবনা জেলায় ১ হাজার ১৩৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ