শেরপুরে ঐতিহাসিক পৌনে তিন আনী জমিদার বাড়ি: ঐতিহ্য ও স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন

পৌনে তিন আনী জমিদার বাড়ি
পৌনে তিন আনী জমিদার বাড়ি  © টিডিসি ফটো

শেরপুর জেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক নিদর্শন হলো ‘পৌনে তিন আনী জমিদার বাড়ি’। জমিদার সতেন্দ্র মোহন চৌধুরী ও জ্ঞানেন্দ্র মোহন চৌধুরীর বাসভবন হিসেবেই এই ভবনের সূচনা হয়েছিল। সময়ের পরিক্রমায় এটি আজ শেরপুরবাসীর ঐতিহ্য ও কৌতূহলের এক গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।

গ্রিক ও ইউরোপীয় ধাঁচের মিশেলে নির্মিত এই জমিদার বাড়ির স্থাপত্যশৈলী অনন্য। বড় আকৃতির চতুষ্কোণ স্তম্ভ, কারুকার্যখচিত কার্নিশ এবং চুন-সুড়কির আস্তরণ এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছাদে ঢালাই লোহার রেলিং ও পলেস্তারা প্রাচীন নির্মাণশৈলীর নিদর্শন বহন করে।

ভবনের অভ্যন্তরে রয়েছে একটি প্রাচীন মন্দির, যার বেদি ও অলংকরণ আজও পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে। বাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব কোণের রংমহল ছিল জমিদার পরিবারের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র, যেখানে একসময় অনুষ্ঠিত হতো সঙ্গীত, নৃত্য ও নাটকের আসর। ফুল, লতা ও পাতার নান্দনিক অলংকরণে সজ্জিত রংমহলটি জমিদারি ঐতিহ্য ও রুচির পরিচায়ক।

বাড়ির সামনে রয়েছে একটি সুসজ্জিত পুকুর, যার একপাশে শান বাঁধানো ঘাট। এটি একসময় জমিদার পরিবারের ব্যবহারের জন্য নির্মিত হয়েছিল। আজও পুকুরটি এলাকার পরিবেশে শীতলতা ও ঐতিহ্যের ছোঁয়া যোগ করে।

‘পৌনে তিন আনী জমিদার বাড়ি’ নামটির পেছনে রয়েছে কৌতূহলোদ্দীপক ইতিহাস। ধারণা করা হয়, জমিদারির অংশীদারিত্ব বা কর প্রথার অনুপাতে ‘পৌনে তিন আনী’ অংশ ছিল এ বাড়ির অধিপতিদের, যা থেকেই নামকরণ হয় বাড়িটির।

ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে সোনার বাংলা, চেম্বার অব কমার্স পরিবহনসহ বিভিন্ন বাসে সরাসরি শেরপুর জেলা শহরে পৌঁছানো যায়। সেখান থেকে রিকশা, অটো বা সিএনজি'তে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরত্বে সহজেই পৌঁছানো সম্ভব পৌনে তিন আনী জমিদার বাড়িতে।

এলাকায় পর্যটকদের জন্য রয়েছে বেশ কিছু মানসম্মত আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ। ফলে এখানে ঘুরতে এসে থাকা–খাওয়ার কোনো অসুবিধা হয় না।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিক মিয়া বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই এই জমিদার বাড়িটি দেখে আসছি। একসময় এখানে অনেক অনুষ্ঠান হতো, দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসত দেখতে। এখন অনেক অংশ জীর্ণ হয়ে গেলেও ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়ে গেছে। সরকারের নজর পড়লে এটি দারুণ পর্যটনকেন্দ্র হতে পারে।‘

আরেক দর্শনার্থী মাহমুদা রানী বলেন, ‘আমি দর্শনীয় স্থান ঘুরে ঘুরে দেখতে ভালোবাসি, তাই জমিদার বাড়ি ঘুরে দেখা আমার খুব ভালো লাগে। স্থাপত্য আর পুকুরের ঘাট দেখলেই বোঝা যায় কত যত্ন করে বানানো হয়েছিল। সামান্য রক্ষণাবেক্ষণেই এটি শিক্ষার্থী ও পর্যটকদের জন্য দারুণ এক স্পট হতে পারে।‘

শেরপুর শহরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জীবন্ত সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পৌনে তিন আনী জমিদার বাড়ি। নান্দনিক স্থাপত্য ও জমিদারি ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে এটি শুধু একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা নয়, বরং এক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার। সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হয়ে উঠতে পারে ইতিহাস, শিক্ষা ও পর্যটনের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।

 

 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence