সাতক্ষীরায় খোলপেটুয়া নদীর চর বনায়নের গাছ নির্বিচারে কাটছে দুর্বৃত্তরা

ধীরে ধীরে উজাড় হয়ে যাচ্ছে পুরো বনাঞ্চল
ধীরে ধীরে উজাড় হয়ে যাচ্ছে পুরো বনাঞ্চল  © টিডিসি

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ও গাবুরা ইউনিয়নের সংযোগস্থল চৌদ্দরশি ব্রিজের পশ্চিমে খোলপেটুয়া নদীর তীরে প্রায় ৩০০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা চর বনায়নের গাছ নির্বিচারে কেটে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। দীর্ঘদিন ধরে গাছ কাটা চললেও প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এলাকাবাসীর দাবি, দুই ইউনিয়নের কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র দিন-রাত সমানতালে করাত ও কুঠার দিয়ে গাছ কেটে পাচার করছে। বনাঞ্চলের ভেতরে যেখানে-সেখানে গর্ত খুঁড়ে মাছ ধরার ফাঁদ তৈরি করায় নতুন গাছ জন্মাতে পারছে না। ফলে ধীরে ধীরে উজাড় হয়ে যাচ্ছে পুরো বনাঞ্চল। অথচ বহু বছর ধরে ঝড়–জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন দুর্যোগ থেকে উপকূলীয় এলাকাকে রক্ষা করেছে এই সবুজ চর বনায়ন।

খোকন সরদার নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,আগে চরে প্রচুর গাছ ছিল। এখন প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়েছে। অনেক সময় গাছ কেটে রেখে যায়, পরে সেগুলো নিয়ে যায়। মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করে মরা গাছ কাটা হচ্ছে।

তরুণ মোস্তফা আল আমিন বলেন, ৭০০ বিঘা জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা এই বনই নদীপাড়ের মানুষের প্রধান ভরসা। কিন্তু মাছ শিকারিরা গর্ত করে রেণুপোনা ধরে, আর গাছ কাটায় নতুন গাছ জন্মাতে পারছে না। এভাবে চলতে থাকলে বন আর টিকবে না।

অন্য এক বাসিন্দা আবু মুছা অভিযোগ করেন, দিনের বেলায় গাছ কেটে রেখে যায়, আর জোয়ারের সময় নৌকায় করে নিয়ে যায়। আগে বন রক্ষায় কমিটি ছিল, এখন নেই। সেই সুযোগে চলছে নির্বিচারে গাছ কাটা।

স্থানীয়রা জানান, গাবুরা ইউনিয়নের খোলপেটুয়া গ্রাম ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পূর্ব পাতাখালীর কয়েকজন বাসিন্দা সরাসরি এ বনের গাছ কাটায় জড়িত। এ ছাড়া কিছু চিহ্নিত মাদকসেবী মাদকের টাকা জোগাড় করতে গাছ কেটে বিক্রি করছে। বন রক্ষার দায়িত্বে থাকা কিছু ব্যক্তি ও ব্যক্তিস্বার্থে এই ধ্বংসযজ্ঞে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

পশ্চিম পাতাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম রুহুল কুদ্দুস বলেন, কিছু দুর্বৃত্ত গাছ কেটে পাচার করছে। আবার রেণু ধরার জন্য শতাধিক গর্ত করা হয়েছে। ফলে পুরোনো গাছ যেমন নষ্ট হচ্ছে, নতুন চারাগাছ জন্মাতেও বাধা তৈরি হচ্ছে। আগে যারা বনের দায়িত্বে ছিলেন, তারাও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ কাজে জড়িত ছিলেন।

পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী পরিচালক সোহানুর রহমান বলেন, গর্ত খুঁড়ে মাছ ধরা আর নির্বিচারে গাছ কাটা পরিবেশের জন্য ভয়ংকর হুমকি। এতে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। অথচ এসব সামাজিক বন উপকূলকে প্রাকৃতিক বেষ্টনী হিসেবে রক্ষা করে। বন ধ্বংস হলে পরিবেশের ভারসাম্য পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে।

পদ্মপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদুল ইসলাম বলেন, খোলপেটুয়া নদীর চর বনায়নের গাছ কাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। দুর্বৃত্তরা চুরি করে গাছ কেটে পাচার করছে। তাদের ধরার চেষ্টা চলছে।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রনী খাতুন বলেন, এ ধরনের বেআইনি গাছ কাটার ঘটনা দুঃখজনক। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও বন বিভাগকে জানানো হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে প্রশাসনও সরাসরি পদক্ষেপ নেবে।


সর্বশেষ সংবাদ