ভবদহে চার দশকের জলাবদ্ধতা: শত শত কোটি টাকা ব্যয়েও মুক্তি নেই

বর্ষা এলেই পানিবন্দী হয়ে পড়েন ভবদহের এলাকার বাসিন্দারা
বর্ষা এলেই পানিবন্দী হয়ে পড়েন ভবদহের এলাকার বাসিন্দারা  © টিডিসি

প্রায় চার দশক ধরে যশোর-খুলনা অঞ্চলের লাখো মানুষ ভবদহের জলাবদ্ধতার দুঃসহ যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছেন। বর্ষা এলেই পানিবন্দী হয়ে পড়ে শত শত গ্রাম, ডুবে যায় ঘরবাড়ি ও ফসল। একের পর এক প্রকল্পে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হলেও সমাধান আসেনি। ফলে ভুক্তভোগীরা চরম অবিশ্বাসে—কারণ তাদের কাছে জলাবদ্ধতার কষ্ট যেন আশ্বাসের চেয়েও বড় বাস্তবতা।

পানিনিষ্কাশনের একমাত্র পথ ভবদহ স্লুইসগেট ১৯৬৩ সালে স্থাপন করা হয়। কিন্তু আশপাশের নদী ও খালগুলোতে অতিরিক্ত পলি জমে ’৮০-এর দশক থেকে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। ফলে মনিরামপুর, অভয়নগর, কেশবপুর, ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলার প্রায় ৩০০ গ্রাম নিয়মিত পানিবন্দী হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে অসংখ্য পরিবার ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

জানা যায়, চার দশকে জলাবদ্ধতা নিরসনে একের পর এক প্রকল্প নেওয়া হলেও কার্যকর কোনো ফল মেলেনি। ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি এবং স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এ পর্যন্ত ৮০০ কোটির বেশি টাকা ব্যয় হলেও প্রকৃত কাজ হয়নি; বরং সিংহভাগ অর্থ লুটপাট হয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালে খুলনা-যশোর ড্রেনেজ রিহ্যাবিলিটেশন প্রকল্পে বরাদ্দ হয় ২২৯ কোটি টাকা। এরপর ২০০২ সালে ২৫২ কোটি, ২০০৬ সালে ৬৯ কোটি, ২০১১ সালে ৭১ কোটি, ২০১৪ সালে ৪৪ কোটি এবং সর্বশেষ আমডাঙ্গা খাল খননে ৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বর্তমানে নদী খননের জন্য আরও ১৪০ কোটির একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে কুলটিয়া, লখাইডাঙ্গা, বাজে কুলটিয়া, আমিনপুর, হাসাডাঙ্গা প্রভৃতি গ্রামে গেলে দেখা যায় ভয়াবহ দুর্ভোগের চিত্র।
লখাইডাঙ্গার গৃহবধূ কাকলী রানী বিশ্বাস ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘এভাবে আর কত দিন জলের সঙ্গে বসবাস করবো? কারো কাছে আর কোনো দাবি করবো না, বলে লাভ নেই।’

আমিনপুরের মুক্তা খাতুন জানান, এক মাস ধরে তাদের ঘরে পানি উঠেছে। রান্না করতে হচ্ছে বারান্দায়।

ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রনজিৎ বাওয়ালি বলেন, ‘বিগত সরকারগুলো শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও তার কোনো সুফল মেলেনি। সিংহভাগ অর্থ পাউবোর অসাধু কর্মকর্তাসহ জনপ্রতিনিধিদের পকেটে গেছে।’

পাউবো যশোর অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী দেবাশীষ ব্যানার্জী জানান, ভবদহ সংলগ্ন নদী-খাল খননের জন্য ১৪০ কোটি টাকার প্রস্তাব একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ