চৌগাছায় ৪ হাজার বিঘা জমির ফসল পানির নিচে, ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা
- যশোর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৫, ০১:০৩ PM , আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২৫, ০৬:০৬ PM
টানা তিন মাসের ভারী বৃষ্টিতে যশোরের চৌগাছা উপজেলার নারানপুর ইউনিয়নে প্রায় ৪ হাজার বিঘা জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত ১০ হাজার পরিবার সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিনিষ্কাশনের স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছরই কৃষি খাতে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এবার ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, নারানপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ সোনাবেলে ও ফাসতলা মাঠজুড়ে শুধু থই থই করছে বৃষ্টির পানি। মাঠের পর মাঠ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ধান, কলা, পাট, ড্রাগন ও পেয়ারা বাগানসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি সবজিক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, বিগত ৩০ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে এই ফসলি জমিগুলো পানির নিচে ডুবে থাকে। এতে তাদের জীবন-জীবিকা চরম হুমকির মুখে পড়েছে। নারানপুর ইউনিয়নের চাদপাড়া, গোয়াতুলি, বড় খানপুর, কেসমত খানপুর, বাদেখানপুর, নারণপুর, বন্দলীতলা, বাটিকামকলি গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে এই সোনাবেলে ও ফাসতলা মাঠ অবস্থিত।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ইসলাম আলী বিশ্বাস বলেন, ‘এখানে আমরা ধান, ভুট্টা, পাটের চাষ করি। কিন্তু ফসল তোলার ঠিক আগমুহূর্তে প্রতিবছরই পানিতে সব তলিয়ে যায়। এভাবে বছরের পর বছর আমাদের চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। আমন মৌসুমে ৫০ কোটির উপরে ক্ষতি হবে।’
আরেক কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, ‘মাঠে পানি না থাকলে আমরা বছরে তিন থেকে চার বার ফসল ঘরে তুলতে পারতাম। কিন্তু এখন এই জমিগুলো একফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। এতে শুধু কৃষকদেরই ক্ষতি হচ্ছে না, বরং এই অঞ্চলের সামগ্রিক কৃষি খাতেও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।’
আরও পড়ুন: ৩৩ বছরেই রাষ্ট্রদূত, প্রশংসায় ভাসছেন ঢাবির সাবেক ছাত্র নাজমুল
স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য স্থানীয় কৃষক তরিকুল ইসলাম ডাবলু বলেন, ‘সম্প্রতি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও চৌগাছা উপজেলা পরিষদে লিখিত আবেদন করেছেন তারা। প্রতিবছর জমিগুলো পানিতে তলিয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অথচ মাত্র আধা কিলোমিটারের একটি ড্রেন নির্মাণ করে এই পানি চৌগাছা কপোতাক্ষ নদে ফেলতে পারলে কৃষকদের এই কষ্ট লাঘব হয়ে যেত।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ৩০ বছর আগে একজন স্থানীয় চেয়ারম্যান ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে আর কেউ তাদের কথা ভাবেনি। দ্রুত একটি ড্রেন নির্মাণ করে ৪ হাজার বিঘা ফসলি জমির পানি স্থায়ীভাবে নিষ্কাশনের জন্য তিনি উপজেলা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
চৌগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুশাব্বির হোসাইন বলেন, এ বছর অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে নারানপুর ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এই ইউনিয়নের ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান হয়। এ বছর প্রায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ধান রোপণ হয়েছে এবং ৫০০ হেক্টর জমি এখনও জলাবদ্ধ আছে। এই সমস্যা সমাধানে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যৌথভাবে কাজ করছে। জলবদ্ধতার কারণে এবাবের আমন মৌসুমে ৫০ কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা ইসলাম জানান, স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কৃষকরা একটি আবেদন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসন গুরুত্বসহকারে কাজ করছে।