মা-ভাই-বোন খুন, উপদেষ্টা আসিফের বাবার গ্রেপ্তার চান রুমা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০৪:২০ PM , আপডেট: ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১০:৩২ PM
কুমিল্লার আলোচিত ত্রিপল হত্যার ঘটনায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বাবা বিল্লাল হোসেনকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার। সোমবার (৪ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান মা, বাবা ও ভাইকে হারানো রুমা আক্তার। তাকেও সেদিন কুপিয়ে জখম করা হয়েছিল।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ৩ জুলাই আসিফ মাহমুদের বাবার মদদে আমার মা, ভাই ও বোনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেদিন আমাকেও কুপিয়ে জখম করেন তারা। কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই। মামলা করলেও প্রধান আসামি উপদেষ্টা আসিফের বাবার নাম বাদ দিয়ে পুলিশ ইচ্ছেমতো অধিকাংশ আসামিদের নাম দেয়।
ঘটনার দিন ট্রিপল নাইনে ফোন দিয়েও প্রতিকার পাননি অভিযোগ করে রুমা আক্তার বলেন, উল্টো পুলিশের উপস্থিতিতে হত্যা নিশ্চিত করা হয়। ঘটনার পর মামলা করা হলেও আসামিদের ভয়ে পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
সেদিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে রুমা বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার একদিন আগে মোবাইল চুরির ঘটনা নিয়ে শুরু হয় হট্টগোল। চুরির কারণে একটা ছেলেকে আমাদের গ্রামের রবিউলের বাড়িতে মারধর করা হলে, তার বাবা এসে কোনোভাবেই তার ছেলেকে বাঁচাতে না পেরে আমার মায়ের কাছে এসে সাহায্য চায়। তখন আমার মা সেখানে গিয়ে তাদের বলে, চোরটা যদি মরে যায় তাহলে তো আমরা আশেপাশের সবাই ফেঁসে যাব। হয় তাকে ছেড়ে দাও, না হয় পুলিশে দাও। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে থাকা বাচ্চু মেম্বার, রবি, শরিফ, বাছিদ, রফিক, আবু বক্কর, হারুনরা একযোগে বলে ওঠে এই তুই চোরের পক্ষ ধরে আসছিস কেন? তুই নিজেও চোর এই বলে মায়ের উপরও চড়াও হয়। আমার ভাই তা শুনে দৌড়ে গিয়ে আমার মাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এদিকে, সেই চোরকে সেখান থেকে নিয়ে অন্যত্র চলে যায় শরীফের লোকজন।
ছেলের খোঁজ না পেয়ে চোরের বাবা বাঙ্গরা বাজার থানায় অভিযোগ করলে, বাচ্চু মেম্বার, রবিউল এবং শরীফের লোকজন আমার মা’কে সন্দেহ করে যে, আমার মা তাকে সহায়তা করেছে। এই অভিযোগে দুই জুলাই রাতে কড়ইবাড়ি গ্রামের তারু মিয়ার বাড়িতে শিমুল বিল্লাহ চেয়ারম্যান, আনু মেম্বার এর উপস্থিতিতে বাচ্চু মেম্বার, রবিউল ও শরিফের আহ্বানে এক গোগন বৈঠক হয়। সেখানে প্রথমে আমার মা’কে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়, পরবর্তীতে আমরা বিচারপ্রার্থী হবো এই ভয়ে আমাদেরও শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।
তিনি আরও বলেন, হত্যা করাতে বেশ কিছু টাকা লেনদেন হয় এবং কিছু খুনি ভাড়া করা হয়। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর দায়িত্ব নেয় শরিফ, আনু মেম্বার, বাছির, রকি, বাচ্চু মেম্বার, বাবুল, রবিউল, রবিউলের ছেলেরা। মামলার দায়িত্বে উপদেষ্টার বাবার কথা উল্লেখ করে তার পারমিশন আছে জানিয়ে শিমুল চেয়ারম্যান সব দেখার কথা বলেন। আর মিডিয়ার দায়িত্ব নেয় মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল, আবু বক্কর, মোস্তফা, বিল্লাল। সারারাত তারা প্রস্তুতি নেয় এবং পরের দিন ৩ জুলাই সকাল ৬টায় সন্ত্রাসী কায়াদায় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী ও এলাকার চিহ্নিত এই সন্ত্রাসীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। কি নির্মমভাবে ওরা আমার চোখের সামনেই প্রথমে আমার মা, এরপর আমার ভাই ও বোনকে মেরে ফেলে যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।
রুমা আক্তার বলেন, আমার মাথায় ৭২টি শেলাই আছে। শরীরের এমন কোনো স্থান নেই যেখানে আঘাত করেনি তারা। তারা ভেবেছিল আমি মারা গেছি। আল্লাহ তার অলৌকিক শক্তি দিয়ে হয়তোবা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
তিনি আরও বলেন, র্যাব কয়েকজন আসামি ধরলেও পরে আর কোনো আসামি ধরা হয়নি। তবে, এই মামলা নিয়ে আমাদের আপত্তি থাকলেও পুলিশ তাতে কর্ণপাত করছে না। কারণ, এই ঘটনায় আমার বোন রিক্তা আক্তারকে বাদী করলেও আসামি সাজিয়েছে পুলিশ নিজেই। তাই প্রধান আসামি হিসেবে বিল্লাল মাস্টারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা আসিফের বাবার মদদে এই হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেওয়া শিমুল চেয়ারম্যানরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিছু আসামির জামিনও হয়েছে। অন্য আসামিরা প্রকাশ্যেই ঘুরছেন এলাকায়। আমরা শুনেছি এবং আমাদের বিশ্বাস শিমুল চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা আসিফের বাসাতেই লুকিয়ে রেখেছে তার বাবা।
অভিযোগকারী বলেন, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। শিমুল চেয়ারম্যান এবং এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো আসামিদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মামলার পুনর্বিন্যাস করতে হবে। সেই সময় পরিবারের তিনজনের হত্যাকাণ্ড এবং বাকিরাও আহত থাকায় আমার বোন রিক্তা আক্তার মামলায় আসামিদের নাম সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেনি এবং মামলার আসামি নির্ধারণ পুলিশ কর্তৃক হওয়ায় অপরাধীদের অনেকের নামই বাদ পড়েছে, যেগুলো নতুন করে লিপিবদ্ধ করতে হবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে অপরাধীদের দ্রুত শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।
রুমা বলেন, আজকের পর থেকে আমাদের ওপর আর কোনো আঘাত আসলে এর জন্য সব দায় থাকবে উপদেষ্টা আসিফ ও তার বাবা বিল্লাল হোসেনের। আজকের পরে আমাদের কারো কোনো ভিন্ন বক্তব্য সামাজিক মাধ্যম বা কোথাও দেখলে আপনারা ধরে নিবেন, আসিফ মাহমুদের লোকজন জোরপূর্বক আমাদের দিয়ে সেগুলো বলিয়ে মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন। যেমন: আমাদের সৎ বাবা জুয়েল হাসানকে কয়েকদিন আগে আসিফ মাহমুদের লোকজন তুলে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ভিন্ন বক্তব্য দিতে বাধ্য করিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই সংবাদ সম্মেলনের পর তারা (খুনিরা) আমাদের ওপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবে। সুতরাং এরপর আমাদের পরিবারের কারো ওপর কোনো আঘাত বা কারো কিছু হলে আপনারা সাক্ষী থাকলেন এর সব দায় নিতে হবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে।
রুমা আক্তার বলেন, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের উদ্দেশে আমাদের একটাই কথা, আমাদের পরিবারের মা, ভাই, বোন সবাইকে হারিয়ে আমরা শেষ। আমাদের আর শেষ কইরেন না। আমরা বাচঁতে চাই। আমাদের একটু বাচঁতে দিন।