‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ পায়নি জুলাই যোদ্ধারা

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে অনুষ্ঠানে
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে অনুষ্ঠানে  © সংগৃহীত

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে ছাত্র জনতার ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস–২০২৫’উপলক্ষে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে প্রথম সারিতে নেতৃত্ব দেওয়া জুলাই যোদ্ধারা আমন্ত্রণ পায়নি।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে কলেজের শিক্ষক, কর্মচারী  এবং কিছু শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। তবে এ আয়োজনে বাদ পড়েছেন আন্দোলনের সূতিকারক ও জেলার প্রধান সংগঠক ইমরান হোসেন, আন্দোলনের অন্যতম নেতা বখতিয়ার হোসেন, তৎকালীন ছাত্রশিবিরের মো. নাজমুল হোসেন রনী, কলেজ ছাত্রদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মোহাম্মদ শাহাজুদ্দীনসহ প্রথম সারির অনেক নেতা।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ জুন সাতক্ষীরায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয় ইমরান হোসেনের নেতৃত্বে। তিনি ছিলেন জেলার প্রধান সমন্বয়কারী। পরে ১৩ জুলাই ছাত্র–জনতা একত্রিত হয়ে রাজপথে নামে। সেই দিন থেকেই শুরু হয় সাতক্ষীরার রাজপথের ইতিহাস। এরপর ১৮ জুলাই ইমরানসহ ৩৫ জন আন্দোলনকারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। আন্দোলনের সেই রক্তাক্ত দিনগুলোই পরবর্তীতে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে ওঠে।

ইমরান হোসেন বলেন, সাতক্ষীরায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুটা আমরা কয়েকজন সাধারণ ছাত্র মিলে করি। তখন কেউ পাশে ছিল না। রাজনৈতিক দলগুলো তখন বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছিল। পরে যখন আন্দোলন বড় হয়, তখন তারা এগিয়ে আসে। আজকের এই কর্মসূচিতে আমাদের বাদ দেওয়া ইতিহাস থেকে আমাদের মুছে ফেলার চেষ্টারই নামান্তর।

বখতিয়ার হোসেন বলেন, আমি জানতেই পারিনি কলেজে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস হচ্ছে। নিশ্চই আমার থেকে বড় বিপ্লবীদের নিয়ে অনুষ্ঠান হয়েছে! যদি তা না হয়, তাহলে কাদের নিয়ে দিবস পালিত হলো? দুঃখের বিষয়, তখনও শিক্ষকেরা বৈষম্য করেছিলেন, এখনো করছেন।

তিনি আরও বলেন, ইতিপূর্বে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের যে অধ্যক্ষ দায়িত্বে ছিলেন, আন্দোলন চলাকালীন সময়ে তিনি আমাদের নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়ে আন্দোলন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছিলেন। তবুও আমরা পিছপা হইনি, আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছি, আর শেষ পর্যন্ত সরকারের পতন ঘটেছে। সরকারের পাশাপাশি পতন ঘটেছে সেই অধ্যক্ষেরও।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ পেয়েছে নতুন অধ্যক্ষ। তবে বর্তমান অধ্যক্ষ ‘জুলাই’ কে ধারণ করছেন না। যদি তিনি ‘জুলাই’ কে অন্তরে ধারণ করতেন, তবে ছাত্র-জনতার সাথে একাত্ম হয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস পালন করতেন। বিশেষ করে সাতক্ষীরার আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে মূলত ছাত্ররাই, আর নেতৃত্ব দিয়েছে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। অথচ আজ সেই কলেজের কর্মসূচি সম্পর্কে, কলেজের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্ররাই কিছু জানে, যেটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মাসুদুল আলম বলেন, ২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে সাতক্ষীরায় ছাত্রদলের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। অথচ আজকের এই দিবসে আমাদের দাওয়াতও দেওয়া হয়নি, এটি স্পষ্ট রাজনৈতিক বৈষম্য।

কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গণঅভ্যুত্থান ছিল ছাত্রসমাজের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। ছাত্রশিবির সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। আজকের আয়োজনে আমাদের না ডাকা ইতিহাস ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল হাশেম বলেন, সব ছাত্রকে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা আগের দিন। সরকারি কোনো নির্দেশনা নেই, আমাদের বিভাগেরও কোনো নির্দেশনা নেই। তবে জুলাই মাসের ৩১ তারিখে একটি প্রাথমিক নির্দেশনা দেখে আমরা প্রোগ্রাম আয়োজন করেছি। কলেজের পেইজে সকল ছাত্রদের উদ্দেশ্যে আমন্ত্রণ জানিয়েছি, যারা আমাদের ছাত্র তারা তো পেইজের সঙ্গে যুক্ত আছেই।

কলেজের ছাত্রদের মধ্যে যারা গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখ সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের কি বিশেষভাবে বলতে পারতেন কিনা প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, সম্মুখ সারিতে নেতৃত্ব বলতে হলে তখন রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকতে হতো। কারণ রাজনৈতিক দলের আগেও তাদের পরিচয়, তারা আমাদের ছাত্র।


সর্বশেষ সংবাদ