জুলাই আন্দোলনে সাতক্ষীরার প্রথম শহীদ আসিফকে শ্রদ্ধায় স্মরণ
- সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৫, ০৫:২৪ PM , আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৩ PM
আজ ১৮ জুলাই, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাতক্ষীরার প্রথম শহীদ আসিফ হাসানের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী। ২০২৪ সালের এই দিনে ঢাকার উত্তরা আজমপুর এলাকায় একটি ছাত্র মিছিলে পুলিশের ছোড়া গুলিতে প্রাণ হারান সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার আস্কারপুর গ্রামের তরুণ শিক্ষার্থী আসিফ হাসান (২১)।
এ উপলক্ষে শুক্রবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সাতক্ষীরা জেলা শাখা শহীদের গ্রামের বাড়িতে আয়োজন করে দোয়া মাহফিল, মোনাজাত ও স্মরণসভা। উপস্থিত ছিলেন শহীদের পরিবার, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, সহপাঠী ও আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
জুলাই আন্দোলনের ময়দানে প্রাণ বিসর্জন দেন আসিফ। তার হাতে ছিল একটি পানির বোতল—আহত এক সহযোদ্ধাকে পানি খাওয়াতে গিয়েই গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
শহীদ আসিফের বাবার মাহমুদ আলমের চোখে ছিল অশ্রু আর মা শিরীন সুলতানার কণ্ঠে ভেসে আসছিল কান্নার ঝরনাধারা। তিনি অস্ফুট স্বরে বলছিলেন, ‘আমার আসিফকে আন্দোলনে পাঠিয়েছিলাম—সবাই ফিরেছে, ফিরেনি শুধু আমার পাগল আসিফ। আগের দিন রাতে ও আমাকে বলেছিল, মা, একটু ঘুম পাড়িয়ে দাও না। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। কে জানত, এটাই হবে ওর শেষ ঘুম? সকালে আন্দোলনে গিয়ে আর কখনো ফিরে আসেনি আমার আসিফ।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সাতক্ষীরা জেলা শাখার আহ্বায়ক আরাফাত হোসাইন বলেন, ‘আসিফ হাসান আমাদের আন্দোলনের শুধু একজন সদস্য ছিলেন না, তিনি ছিলেন আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস, সাহসের প্রতীক। তিনি হাতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেননি, বরং একটি পানির বোতল হাতে নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। আহত সহযোদ্ধাকে পানি খাওয়াতে গিয়ে নিজের বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন—এই আত্মত্যাগ কেবল সাহসিকতা নয়, এটি মানবিকতার চূড়ান্ত উদাহরণ। আসিফ আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর আদর্শ, তার চেতনাই আমাদের পথ দেখায়।’
এর আগে সকাল ৯টায় শহীদ আসিফ হাসানের কবর জিয়ারত করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সাতক্ষীরা-৩ আসনের প্রার্থী মুফতি মুহাদ্দিস রবিউল বাশার বলেন, আসিফ দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক। তাকে শ্রদ্ধা জানাতে এবং তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে আমরা নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে এসেছি। এ আন্দোলনে আরও অনেক তরুণ বুক চিতিয়ে গুলির সামনে দাঁড়িয়েছে। আল্লাহ যেন সবাইকে শহীদের মর্যাদা দেন এবং জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করেন।
শহীদ আসিফ হাসান ২০০৩ সালের ৫ আগস্ট সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার আস্কারপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নলতা আহছানিয়া রেসিডেনশিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকার উত্তরা নর্দান ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন।
২০২৪ সালের ১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিনি। এক আহত সহযোদ্ধাকে পানি খাওয়াতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন এই তরুণ। তার স্মরণে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন—‘আস্কারপুর শহীদ আসিফ আদর্শ বন্ধুমহল’।